যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে যোগ দেয়, তাহলে পুরো অঞ্চলটির জন্য তা ‘নরক’ হয়ে উঠবে—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদে। খবর বিবিসির।
তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এটা আমেরিকার যুদ্ধ নয়’, আর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি এতে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে তিনি চিরকাল এমন একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত হবেন, যিনি এমন এক যুদ্ধে ঢুকে পড়েছিলেন যার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন হস্তক্ষেপ এই সংঘাতকে একটি ‘অচলাবস্থায়’ পরিণত করবে, আগ্রাসন আরও বাড়াবে এবং ‘নৃশংস বর্বরতার’ অবসান বিলম্বিত করবে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তিনি এ বক্তব্য দেন। তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ওই হামলা মূলত হাসপাতালের পাশে থাকা একটি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করেই চালানো হয়েছিল, হাসপাতালে নয়।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে হামলার ঘটনায় ৭১ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ছিল ‘নিষ্ক্রিয়’ আরাক হেভি ওয়াটার রিয়্যাক্টর এবং নাতানজ স্থাপনা।
তবে ইসরায়েলি হামলায় ইরানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কিনা, সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি তেহরান।
এই সর্বশেষ হামলাগুলো এমন এক সংকটময় সময়ে ঘটছে, যখন হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে—আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদে জোর দিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই, কূটনীতিই আমাদের প্রথম পছন্দ’, তবে বোমাবর্ষণ চলতে থাকলে ‘আমরা কোনও আলোচনার সূচনা করতে পারি না’।
তিনি বারবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের হামলাগুলোকে ‘জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদের অধীনে আত্মরক্ষা’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, ‘আমরা তখন কূটনীতির মাঝপথে ছিলাম। ১৩ জুন সংঘাতের বড় মাত্রার উত্তেজনার অংশ হিসেবে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় এবং কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করে ‘
উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সংঘাতকে ‘অকারণে সৃষ্টি হওয়া’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে মন্তব্য করেন।
ইরান পারমাণবিক চুক্তি মেনে নিলে সংঘাত এড়ানো যেত— ট্রাম্পের ওই দাবির জবাবে খাতিবজাদে বলেন, তারা তখনও আলোচনায় ছিল, কিন্তু ইসরায়েল আক্রমণ চালিয়ে আলোচনাকে ‘ব্যাহত’ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মাসকাটে পারমাণবিক আলোচনায় এর ষষ্ঠ দফার বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এবং আসলে একটি চুক্তির একধাপ দূরেই ছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেকেউ এর চেয়ে ভালো জানেন যে আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি ছিলাম।’
তিনি ট্রাম্পের ‘বিভ্রান্তিকর এবং বৈপরীত্যপূর্ণ’ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও সাক্ষাৎকারগুলোরও সমালোচনা করেন।
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি শুক্রবার থেকে ফোনে একাধিকবার কথা বলেছেন, সংকটের কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
তিনজন কূটনীতিক, যারা সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথা বলেন এবং বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, তেহরান আলোচনা পুনরায় শুরু করবে না যতক্ষণ না ইসরায়েল হামলা বন্ধ করে।
ইসরায়েল অভিযোগ করেছে যে ইরান সম্প্রতি তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদকে অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার পদক্ষেপ নিয়েছে, যা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা বোমা উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। ইরান সবসময় দাবি করে আসছে যে তার পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।
শুক্রবার, জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে যে ইরান ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সঞ্চয় করেছে—যা অস্ত্র মানের ৯০ শতাংশের কাছাকাছি একটি প্রযুক্তিগত ধাপ—এবং এটি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট হতে পারে।
এই অভিযোগের জবাবে খাতিবজাদে বলেন, ‘এগুলো অর্থহীন কথা। অনুমান বা ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ শুরু করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চাইতাম, তবে অনেক আগেই তৈরি করতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইরান কখনও শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমকে অস্ত্রায়নের জন্য কোনো কর্মসূচি তৈরি করেনি। এটাই শেষ কথা।’
অন্যদিকে, আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো কখনোই আক্রমণের শিকার হওয়া উচিত নয়, যেকোনো পরিস্থিতি বা প্রেক্ষাপটেই না, কারণ এতে মানুষ এবং পরিবেশ উভয়ের ক্ষতি হতে পারে।
খাতিবজাদে কানাডায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলনের পর সম্ভাব্য কূটনৈতিক পথ নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যা শুনছি তা হলো ইউরোপীয়রা মন্ত্রী পর্যায়ে কূটনীতিতে ফিরে যেতে চায়। তারা জেনেভায় একটি বৈঠক করবে এবং আমরা অত্যন্ত খুশি যে অবশেষে তারা আসবে এবং বর্তমান বিষয়গুলো নিয়ে টেবিলে আলোচনা করবে।’