এবার ক্ষমতার পালাবদলে বিচারালয়ের শীর্ষ পদে পরিবর্তনের পর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করার খবর এলেও তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারীরা। শনিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সৈয়দ রিফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করতে হবে বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। শনিবার বিকালে হাইকোর্টের সামনে শিক্ষা চত্বর বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে নেয়া অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছি। এটি আমাদের প্রাথমিক বিজয়। তিনি যখন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তখন একটি গোষ্ঠী আবারও উঠে পড়ে লেগেছে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য। বিশ্বব্যাপী চক্রান্ত শুরু হয়েছে। দেশে-বিদেশে যেকোনও ধরনের ষড়যন্ত্র আমরা ঘুরিয়ে দেবো।’
তিনি দাবি করে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, আজ যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে, বিচার বিভাগীয় ক্যু করে এই সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। আমরা যদি এই বিচারব্যবস্থাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, তাহলে আমাদের যেই ন্যায্যতার স্বপ্ন রয়েছে, সেটি কখনোই প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা হাইকোর্টকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারছি, ততক্ষণ রাজপথ ছাড়াবো না।’
‘আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আশফাক আহমেদকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, গত ১৫ বছর তিনি শেখ হাসিনা সরকারকে সার্ভ করেছেন। গত ১৫ বছর যে অত্যাচার হয়েছে, তিনি তার সহযোগী। তাই আমরা এই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের দাবি, তাকে সরিয়ে সৈয়দ রিফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করতে হবে।’
আরকে সমন্বয়ক বাকের মজুমদার তিন দফা দাবি ঘোষণা করে বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার বিভাগ পুনর্গঠন করতে হবে। শেখ হাসিনার পুলিশ প্রশাসন আমরা চাই না, পুলিশকে পুনর্গঠন করতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশকে নিরস্ত্র করে পুনর্গঠন করতে হবে, যেই পুলিশ হবে জনতার পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, আমাদের তৃতীয় দাবি হলো, সারা দেশে একটি কুচক্রী মহল সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানোর মাধ্যমে আমাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা আন্দোলন করেছে, তারা হামলার পক্ষে নেই। আমরা দেখেছি সংখ্যালঘু ভাইয়েরা তাদের নিরাপত্তা চাচ্ছে, নিরাপত্তার জন্য দাবি তুলেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সঙ্গে বসে তাদের দাবি মেনে নিন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
এর আগে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আপিল বিভাগের সাত বিচারকের মধ্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম পদত্যাগ করেননি। তাকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করা হচ্ছে বলে বিকালে খবর আসে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তৃতীয় অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ছেলে সৈয়দ রেফাত আহমেদ ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার দুই বছর পর স্থায়ী নিয়োগ পান।