1. [email protected] : নিউজ ডেস্কঃ : নিউজ ডেস্কঃ
  2. [email protected] : unikbd :
শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,
৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ঘুমানোর আগে করণীয় আমল

  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪
জিকির শব্দের অর্থ স্মরণ করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। অর্থাৎ নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে সবসময় মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করা, তার আনুগত্য করা।

জিকির এমন ইবাদত যার কোনো সময়, সীমা, পরিমাণ ও শর্ত নেই। 

আল্লাহ তাআলার জিকির দিনে-রাতে, অজু অবস্থায়, ওজু ছাড়া, সকাল-সন্ধ্যায়, দাঁড়িয়ে, বসে, এমনকি শুয়েও করা যায়।

আল্লাহ তাআলা বান্দাদের সর্বাবস্থায় অধিক হারে তার জিকির করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা ঘোষণা করো’। (সূরা: আহজাব, আয়াত: ৪১-৪২)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টি বিষয়ে (তারা বলে) হে আমাদের রব! এসব আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি’। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৯১)

ঘুমানোর আগে জিকির করা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল। রাতে যেকোনো নফল ইবাদতের গুরুত্ব বেশি। তাহাজ্জুদের মতো মহান ইবাদতও রাতে সীমাবদ্ধ। এজন্যই পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাতে জাগরণ ইবাদতের জন্য গভীর মনোনিবেশ, হৃদয়ঙ্গম এবং স্পষ্ট উচ্চারণে অনুকূল’। (সূরা: মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ৬)

আল্লাহর জিকিরের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জিকির হলো পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা। রাতে আমল করার মতো কোরআন তেলাওয়াতসহ কিছু ফজিলতপূর্ণ জিকিরের বর্ণনা এসেছে সহিহ হাদিসে। এমন কিছু জিকির নিচে তুলে ধরা হলো—

(১) সূরা বাকারার শেষ ২ আয়াত তেলাওয়াত: বদরি সাহাবি আবু মাসউদ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষ ২ আয়াত তেলাওয়াত করে, তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। (সহিহ বুখারি: ৫০৪০) ‘তার জন্য যথেষ্ট হবে’ বাক্যটির ব্যাখ্যায় একদল আলেম বলেন, এই ২ আয়াত তাহাজ্জুদের বিপরীতে যথেষ্ট হবে। অন্যরা বলেন, আয়াতদ্বয় রাতের বেলা শয়তান, জিন ও মানুষের ক্ষতি থেকে রক্ষায় যথেষ্ট হবে। (শরহুন নববি: ৬/৯১)

(২) সূরা মুলক তেলাওয়াত: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোরআনে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা আছে। যে সূরাটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সূরাটি হলো—তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক…(অর্থাৎ সূরা মুলক)। (সুনানে তিরমিজি: ২৮৯১)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাজি পাঠ করবে আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন। আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যুগে এই সূরাকে ‘মানিআ’ (প্রতিহতকারী বা রক্ষাকারী) বলতাম। (সুনানে নাসায়ি: ১০৫৪৭)

(৩) সাইয়িদুল ইস্তেগফার পাঠ: শাদ্দাদ ইবনুল আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এই ইস্তেগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে ব্যক্তি জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এই দোয়া পড়ে নেবে আর ভোর হওয়ার আগে মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে। আর সাইয়িদুল ইস্তেগফার হলো, اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাকতানি, ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু। আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা’।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো’। (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)

(৪) আয়াতুল কুরসি পাঠ: প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পড়বে, শয়তান সারারাত তার কাছে আসবে না’। (বুখারি: ২৩১১)

(৫) তিন কুল পড়ে ফুঁ দেওয়া: ২ হাতের তালু একত্রে মিলিয়ে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে তাতে ফুঁ দেবে। তারপর ২ হাতের তালুর মাধ্যমে দেহের যতোটা অংশ সম্ভব— মাসেহ করবে। মাসেহ শুরু করবে— মাথা, মুখমণ্ডল ও দেহের সামনের দিক থেকে (এভাবে ৩ বার করবে)। (বুখারি: ৫০১৭)

(৬) আলাদাভাবে সূরা ইখলাস পাঠ: একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের বললেন, ‘তোমাদের কেউ কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কোরআন পড়তে অসমর্থ হবে?’ এতে সকলকে বিষয়টি ভারী মনে করল। বলল, এই কাজ আমাদের মধ্যে কে পারবে হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, ‘সূরা ইখলাস হলো- এক-তৃতীয়াংশ কোরআন’। (বুখারি: ৫০১৫)

(৭) সূরা কাফিরুন পাঠ: প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘রাতে (কুল ইয়া আইয়্যু হাল কা-ফিরুন) (অর্থাৎ সূরা কা-ফিরুন) পাঠ করা শিরক থেকে মুক্তি পেতে উপকারী’। (সহিহ তারগিব: ৬০২)

(৮) তাসবিহ পাঠ: রাসূলুল্লাহ (সা.) তার মেয়ে ফাতেমা (রা.) ও জামাতা আলী (রা.)- কে বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু বলে দেবো না—যা তোমাদের জন্য খাদেম অপেক্ষাও উত্তম হবে? যখন তোমরা তোমাদের বিছানায় যাবে, তখন তোমরা ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলবে; তা খাদেম অপেক্ষাও তোমাদের জন্য উত্তম হবে’। (বুখারি: ৩৭০৫)

(৯) ঘুমানোর দোয়া পাঠ: রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন, তখন তার ডান হাত গালের নীচে রাখতেন, তারপর এ দোয়াটি বলতেন, ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑِﺎﺳْﻤِﻚَ ﺃَﻣُﻮﺕُ ﻭَﺃَﺣْﻴَﺎ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমু-তু ওয়া আহইয়া’।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনার নাম নিয়েই আমি মরছি (ঘুমাচ্ছি) এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত (জাগ্রত) হব’। (বুখারি: ৬৩২৪)

মহানবী (স.) জিকির থেকে গাফেল ব্যক্তিদের জীবিত থাকতেও মৃত বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে এবং যে আল্লাহর জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতদের মতো’। (বুখারি: ৬৪০৭, মুসলিম: ৭৭৯)

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক হই এবং আমি তার সঙ্গে থাকি যখন সে আমার জিকির করে। যদি সে তার মনে মনে আমার জিকির করে আমি তাকে আমার কুদরতি মনে জিকির করি। আর যদি সে আমাকে মজলিসে গণজমায়েতে জিকির করে তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। (বুখারি: ৭৪০৫, মুসলিম: ২৬৭৫)

অতএব, রাব্বুল আরামিন  আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি পেতে হলে সর্বদা জিকির করা মুমিন মুসলমানের জন্য বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উপরোক্ত আমলগুলো প্রতিরাতে করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪
Developed By UNIK BD