১. বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা
বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা রহমতের ধারা হয়ে জমিনে বর্ষিত হয়। তাই সুন্নত হলো বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে নিজেদের পরিধেয় বস্ত্রাংশ মেলে ধরা। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে থাকাকালে একবার বৃষ্টি নামলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাঁর পরিধেয় বস্ত্র প্রসারিত করলেন, যাতে পানি তাকে স্পর্শ করতে পারে। আমরা বললাম, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, কারণ তা তার রবের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।’ (মুসলিম ৮৯৮)
২. বৃষ্টির দোয়া পড়া
রহমতের বৃষ্টি দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। হাদিসে পাকে এসেছে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃষ্টি হতে দেখলে বলতেন-
اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعً
উচ্চারণ :‘ আল্লাহুম্মা সাইয়্যেবান নাফিআ।‘
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুষলধারায় যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারি হয়।’ (বুখারি ১০৩২)
৩. বৃষ্টি চলাকালে দোয়া করা
বৃষ্টি চলমান সময়ে দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময়টি দোয়ার জন্য লুফে নেওয়া সুন্নত। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত সাহল বিন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না কিংবা (তিনি বলেছেন), খুব কমই ফেরত দেওয়া হয়- আজানের সময় দোয়া এবং রণাঙ্গণে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সময়ের দোয়া। অন্য বর্ণনা মতে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া। (আবু দাউদ ২৫৪০)
৪. বৃষ্টির পরে দোয়া পড়া
হজরত জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদাইবিয়ায় রাতে বৃষ্টির পর আমাদের নিয়ে নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে তিনি লোকজনের মুখোমুখি হলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বলেছেন, আমার বান্দাদের কেউ আমার প্রতি ঈমান নিয়ে আর কেউ কেউ আমাকে অস্বীকার করে প্রভাতে উপনীত হয়েছে। যে বলেছে, বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহি তথা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। ফলে সে আমার প্রতি ঈমান আর তারকার প্রতি কুফরি দেখিয়েছে। আর যে বলেছে, অমুক অমুক তারকার কারণে, সে আমার প্রতি অস্বীকারকারী এবং তারকার প্রতি ঈমানদার।’ (বুখারি ৮৪৬; মুসলিম ১৫)
৫. অতি বৃষ্টি বন্ধে দোয়া পড়া
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন জুমার দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবা দেওয়া অবস্থায় এক সাহাবি মসজিদে প্রবেশ করে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! জীবজন্তু মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে, পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন। তখনই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত সম্প্রসারিত করে দোয়া করলেন-
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল আঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন।’ (বুখারি ৯৩৩; মুসলিম ৮৯৭)
৬. বৃষ্টি দোয়া কবুলের সময়
বৃষ্টির সময় হচ্ছে দোয়া কবুলের সময়গুলোর একটি। তাই এ সময় আল্লাহর দরবারে নিজের চাহিদা অনুযায়ী বেশি বেশি দোয়া করা। বৃষ্টি চলমান সময়ে দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময় দোয়ার জন্য লুফে নেয়া সুন্নাত। হজরত সাহল বিন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না কিংবা (তিনি বলেছেন), খুব কমই ফেরত দেওয়া হয়। আজানের সময়ের দোয়া এবং রণাঙ্গণে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সময়ের দোয়া, অন্য বর্ণনা মতে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া।’ (আবু দাউদ ২৫৪০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বৃষ্টির সময় উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। সুন্নত আমলে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।