যদিও গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় দুই মাস পার হয়েছে। তবে এখনো বিক্ষোভ দমনে গুলি ছুঁড়তে নির্দেশ দেওয়া ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হননি।
তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।
বিশ্বস্ত এক সূত্র জানিয়েছে, নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির কয়েকজনের সহায়তায় সেখানেই গোপনে অবস্থান করছেন হারুন। সেখানকার একটি ভবনের সম্মেলনকক্ষে হারুন অর রশিদ বসে রয়েছেন এমন একটি ছবি সূত্রের বরাতে নিশ্চিত করেছে দেশের একাধিক গণমাধ্যম।
জানা যায়, তিনি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পুলিশ ও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। ২০০৬ সালে ডিভি লটারি পেয়ে তার স্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। সে সূত্রে তারা নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করতেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা থাকায় গণঅভ্যুত্থানের পর হারুন অর রশিদ নিউইয়র্ক স্টেটের লং আইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।
২০১১ সালে জাতীয় সংসদের সামনে এক মিছিলে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুককে মারধরের ঘটনায় প্রথম আলোচনায় আসেন হারুন অর রশিদ। এরপর থেকে বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে তার নাম আসে। ডিবিতে মানুষকে তুলে নেওয়া, বিরোধী দলের আন্দোলনে ‘বোমা উদ্ধারের’ প্রহসন, হেফাজতে নির্যাতন, আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়- ইত্যাদি অভিযোগে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন।
৫ আগস্টের পর একটি সূত্র দাবি করেছিল, তিনি গুরুতর আহত হয়ে রাজধানীর একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হারুন অর রশিদকে নিয়ে তারপর থেকেই জনমনে প্রবল কৌতূহল তৈরি হয়। কিন্তু ওই তারিখের পর থেকে তার অবস্থানের বিষয়ে আর কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
অপর একটি সূত্র অবশ্য নিশ্চিত করেছে ৬ আগস্ট হারুন অর রশিদ আদতেই গণপিটুনির শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার এক আত্মীয় গণমাধ্যমকে তখন বলেছিলেন, ‘হারুন এতটাই ‘জনপ্রিয়’ হয়ে গেছেন যে এখন প্রকাশ্যে আসতেও ভয় পাচ্ছেন।’
৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটার সময় জনতার ঢল গণভবনে ঢুকে পড়লে হারুন অর রশিদ ওয়াকিটকিতে গণভবন প্রটেকশন বিভাগের সদস্যদের অ্যাকশনে যেতে বলেন। কিন্তু ওয়াকিটকির অপর প্রান্ত থেকে আর কোনো উত্তর আসেনি। ক্লোজসার্কিট ক্যামেরায় জনতাকে গণভবনে ঢুকতে দেখে হারুন অর রশিদ ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়েন। এরপর দীর্ঘক্ষণ তিনি আর কোনো কথা বলেননি।