জনমত জরিপগুলো এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে ঐতিহাসিক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিয়েছে। নির্বাচনের আগেই নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাম্প অভূতপূর্বভাবে নিজের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। আর ডেমোক্রেট শিবিরের কমলা হ্যারিস স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নিজেকে খুব ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। কারণ এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেট থেকে প্রথমে প্রার্থী হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের প্রথম পর্বে ট্রাম্পের কাছে পরাজয়ের পর সমালোচনার শিকার হন তিনি। দলীয় চাপেই একপর্যায়ে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে স্থলাভিষিক্ত করেন কমলা হ্যারিসকে।
কমলা হ্যারিসের প্রচারদল সোমবার শেষ নির্বাচনি প্রচার শেষে জানিয়েছে, হ্যারিস বুঝতে পারছেন যে, তুমুল লড়াই হবে। কিন্তু তিনি সত্যিকার অর্থেই ‘উদ্দীপ্ত ও উদ্যমী আছেন’। হ্যারিস তার প্রচার সভাগুলোতে ‘আমরা পেছনে ফিরে যাবো না’ স্লোগানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে নেয়া নীতিগুলোর নেতিবাচক প্রভাবগুলোর কথা তুলে ধরেছেন। নির্বাচিত হলে প্রথম দিন থেকেই মার্কিন জনগণের জীবনযাত্রার খরচ কমানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে খাদ্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ, প্রথমবারের মতো বাড়ি কেনার সুবিধা, আবাসনের ব্যবস্থা ও ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি। এবারের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস সবচেয়ে আকর্ষণীয় অঙ্গীকার হচ্ছে গর্ভপাতের অধিকার। মূলত এই প্রতিশ্রুতির কারণেই মার্কিন নারীদের সমর্থন অনেকটা তার দিকে ঝুঁকে গেছে।
অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ ঠেকাতে ‘সীমান্ত বন্ধের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই একটি ইস্যুতেই অনেক মার্কিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। কারণ বাইডেনের শাসনামলে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। অতিরিক্ত অভিবাসী প্রবেশের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সীমান্তবর্তী ছাড়া দূরের অঙ্গরাজ্যগুলোতেও। বিভিন্ন জনমত জরিপ বলছে, অভিবাসন ও অভিবাসী সংকট সমাধানে কমলা হ্যারিসের চেয়ে ট্রাম্পের ওপরই আস্থা বেশির ভাগ আমেরিকানের। অভিবাসী ইস্যু ছাড়াও ট্রাম্প কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আমদানির উপর ১০ শতাংশ শুল্ক কমানো এবং জ্বালানির মূল্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্প সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রাকে সাশ্রয়ী করার অঙ্গীকার করেছেন।
অর্থনীতি, অভিবাসী ও গর্ভপাতের অধিকার ছাড়াও একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু মার্কিন নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। গাজা এবং লেবাননে ভয়াবহ ইসরায়েলি নৃশংসতায় ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শর্তহীন সমর্থন দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়কে এতটাই বিচলিত করেছে যে তারা পরিবর্তনের আশায় ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলেছেন। মুসলিমবিরোধী এবং অভিবাসীবিরোধী বক্তব্যের ইতিহাস সত্ত্বেও, ট্রাম্প এই ধরনের অসন্তুষ্ট ভোটারদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শুক্রবার তিনি ডিয়ারবর্নে কয়েক ডজন আরব আমেরিকানের সাথে দেখা করেছেন।
২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ট্রাম্পের সমর্থকরা ওয়াশিংটনে সহিংসতার যে তাণ্ডব চালিয়েছিল তা মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন। ট্রাম্প পরাজয়ের পরপর নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। এবারের নির্বাচনে তেমন কিছু করার আভাস দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। বিষয়টা অনেক একগুঁয়ে শিশুর মতো-বিচার মানি তালগাছ আমার।
ট্রাম্প ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনে হারলে সেই ফলাফল তিনি মেনে নেবেন না। তিনি সাফ বলেছেন, যদি ২০২৪ সালের নির্বাচনে হেরে যান, তবে এর একমাত্র যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা হবে, ডেমোক্রেটরা তার সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছে। ট্রাম্পের এসব দাবি মোকাবিলায় ডেমোক্রেটরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।