এটা শুধুমাত্র কোরআন লেখার সূচনা নয় বরং নামাজে কেরাত পাঠের সূচনাও এ সূরা দিয়ে করতে হয়। ফাতিহা ছাড়া এ সূরার আরো কিছু নাম রয়েছে। ওইসব নামের মধ্যে ‘উম্মুল কোরআন বা কোরআনের জননী’ নামটি বেশি প্রসিদ্ধ।
কোরআনের মূখ্য আলোচ্য বিষয় তিনটি। যথা: আল্লাহতায়ালার পরিচয়, আল্লাহতায়ালার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানুষের করণীয় ও বর্জনীয়।
সূরা ফাতিহাতে এ তিনটি বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। বাকি সম্পূর্ণ কোরআনে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়ে এ তিনটি বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে এবং এ তিনটি আলোচনার প্রয়োজনে অন্যান্য অনেক বিষয় আনা হয়েছে। তাই রূপক অর্থে সূরা আল ফাতিহাকে পবিত্র কোরআনের জননী বলা হয়।
সূরা ফাতিহার আরেক নাম হামদ। হামদ শব্দের অর্থ প্রশংসা। এ সূরাটি শুরু করা হয়েছে মহান রবের প্রশংসার মধ্য দিয়ে। এই কারণে সূরা ফাতিহাকে হামদ বলা হয়। সালাত নামেও এ সূরা পরিচিত। কেননা, এ সূরা ব্যতীত নামাজ অাদায় হয় না।
যেকোনো রোগ নিরাময় করার অসম্ভব এক আধ্যাত্মিক শক্তি নিহিত আছে এ সূরায়। তাই এই সূরার আরেক নাম সূরাতুশ শিফা। শিফা অর্থ রোগ নিরাময়। এ সূরা দিয়ে যেহেতু ঝাড়-ফুঁক করা যায় তাই আল্লাহর রাসূল (সা.) এ সূরাকে রুকইয়া নামেও অভিহিত করেছেন।
অনেক হাদিস বিশারদের মতে, হাদিসে ‘আসসাবউল মাছানি’ বলতে এ সূরাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, আসসাবউ অর্থ সাত, আর আল মাছানি অর্থ প্রশংসা করা। এ সূরার আয়াত সাতটি এবং প্রত্যেক নামাজের প্রত্যেক রাকাতে এ সূরা পাঠ করে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়। আবার মাছানির আরেক অর্থ আছে পুনরাবৃত্তি। প্রত্যেক নামাজের প্রত্যেক রাকাতে এ সূরা পাঠের পুনরাবৃত্তি করা হয়।
একবার আল্লাহর নবী (সা.) এক সাহাবিকে বললেন, আমি কি তোমাকে বলে দিব, কোরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সূরা কোনটি? সাহাবি বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, আল হামদু সূরার আরেক নাম সাবয়ে মাছানি। আর এটাই কোরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সূরা। আমাকে এ সূরা দান করা হয়েছে।
আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, এ সূরার মতো মর্যাদাপূর্ণ কোনো সূরা আল্লাহতায়ালা তাওরাতে অবতীর্ণ করেননি, ইঞ্জিলে অবতীর্ণ করেননি। এমনকি কোরআনেও দ্বিতীয়টি অবতীর্ণ করেননি।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, একদা আমরা সফরে ছিলাম। আমাদের যাত্রা বিরতিকালে এক বেদুঈন মহিলা আমাদের কাছে এসে বলল, আমাদের গোত্রপতিকে সাপে দংশন করেছে। তার চিকিৎসা করার মতো কেউ এখন আমাদের মাঝে নেই। তোমাদের মধ্যে ঝাড়-ফুঁক করার কেউ আছে কী? আমাদের একজন মহিলার সঙ্গে গেল। সে ঝাড়-ফুঁক করল আর তাতে রোগী ভালো হয়ে উঠল। তারা খুশি হয়ে তাকে ত্রিশটি ছাগল উপহার দিল। সে ওগুলো নিয়ে আমাদের কাছে ফিলে এলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কী ঝাড়-ফুঁক করতে জান? সে বলল, না। তবে, আমি সূরা ফাতিহা দিয়ে এ রোগীকে ঝেড়ে দিয়েছি। আমরা বললাম, মদিনায় যেয়ে নবী (সা.) কে জিজ্ঞাসা না করে আমরা এ ব্যপারে কোনো মন্তব্য করতে পারি না। আমরা মদিনায় পৌঁছার পর নবী করিম (সা.) কে বিষয়টি জানালে তিনি বললেন, ঝাড়-ফুঁকের জন্য সূরা ফাতিহা উৎকৃষ্ট। তোমরা যা পেয়েছ তা ভাগ কর এবং আমাকেও এক ভাগ দাও। -সহিহ বোখারি: ৫০০৭
একবার হজরত জিবরাঈল (আ.) নবী করিম (সা.)-এর কাছে বসাছিলেন। হঠাৎ উপরের দিকে বিকট একটি শব্দ শোনে উপরের দিকে তাকালেন। বললেন, এটা আকাশের একটি দরজা খোলার শব্দ। এ দরজা আগে কখনোই খোলা হয়নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতরণ করলেন। যিনি আগে কখনোই দুনিয়াতে আসেননি। তিনি নবীজীকে সালাম করলেন। বললেন, আপনাকে দু’টো আলোর সুসংবাদ দিচ্ছি। যা আপনার পূর্বের কোনো নবীকে কখনো দেওয়া হয়নি। একটি হলো- সূরা ফাতিহা। দ্বিতীয়টি হলো- সূরা বাকারার শেষ অংশ। -সহিহ মুসলিম: ১৯১৩
মহান আল্লাহতায়ালা ভাব ও অর্থের সাগরের বিশাল জলরাশিকে ছোট আয়তনের চৌবাচ্চায় ভরে দিয়েছেন। তাই এক হাদিসে সূরা আল ফাতিহাকে কোরআনের তিন ভাগের দু’ভাগ বলা হয়েছে।