যদিও নফল নামাজের মধ্যে সবচেয়ে ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ নামাজ তাহাজ্জুদ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসুল (সা.)-এর জন্য তাহাজ্জুদ আদায় আবশ্যক ছিল। তিনি এ নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন। কখনো কাজা হয়ে গেলে দিনে তা আদায় করে নিতেন এবং সাহাবাদের এ নামাজ আদায় করার তাগিদ দিতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। যত্নের সঙ্গে তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা কিয়ামতের দিন বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এ নামাজের পর দোয়া কবুল হয়। প্রতি রাতে তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন। হাদিসে আছে, শেষ রাতে; পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের ডেকে বলেন, ‘কে আছো আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো আমার কাছে চাবে? আমি তাকে তা দেব। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (বুখারি : ১১৪৫)
আল্লাহর কাছে সবসময়ই চাওয়া যায় তবে রাতের নির্জনে তাহাজ্জুদ নামাজের সেজদায় দোয়া করার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তাহাজ্জুদ নামাজ তোমাদের নিয়মিত পড়া উচিত, কেননা এটা অতীতকালের সৎলোকদের আমল ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম ছিল। এই আমল পাপকাজ থেকে বিরত রাখে, মন্দকাজ দূর করে আর শারীরিক রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করে।’ (তিরমিজি)
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় : রাতের শেষার্ধে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম। যদিও এশার নামাজের পর বা রাতে ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত : তাহাজ্জুদ নামাজসহ সব নামাজের নিয়ত মনে মনে করতে হয়। তাই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত মনে মনে এমন সংকল্প করা, ‘আমি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করছি’ বলে নামাজে দাঁড়ালেই হবে।
রাকআত সংখ্যা : তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ২০ রাকাত পর্যন্ত পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো চার রাকাত, কখনো আট রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত আদায় করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সারা বছর তাহাজ্জুদ নামাজ আট রাকাত আদায় করতেন’ (বুখারি)। আমরাও আমাদের সময় সুযোগ মতো সম্ভব হলে ১২ রাকাত, সম্ভব না হলে কমপক্ষে চার রাকাত আদায় করার চেষ্টা করব। তবে দুই রাকাত আদায় করলেও তাহাজ্জুদের নেকি পাওয়া যাবে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এশার নামাজের পর দুই বা ততধিক নফল নামাজ পড়ে, সে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সওয়াব পাবে।’
যেভাবে তাহাজ্জুদ আদায় করব : রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই রাকাত করে এ নামাজ আদায় করতেন। আবার এক সালামে চার রাকাত এবং এক সালামে আট রাকাত পড়েছেন এমন বর্ণনাও পাওয়া যায়। তবে দুই রাকাত করে পড়াই উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট কোনো সুরা নেই। যেকোনো সুরা পাঠ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) লম্বা লম্বা কেরাত পড়তেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজে রুকু-সিজদাসহ অন্যান্য পর্ব দীর্ঘায়িত করা মুস্তাহাব। রুকু সিজদার তাসবিহ অনেকবার পড়া যায় এবং সিজদায় কুরআন-হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া পাঠের বিধানও আছে।
বিতের নামাজ কখন পড়বেন : অনেকে মনে করেন, বিতের নামাজ আদায়ের পর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায় না। এটা ভুল ধারণা। উত্তম হলো যিনি নিয়মিত শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন তিনি তাহাজ্জুদ নামাজের পর বিতের নামাজ আদায় করবেন। আর যে ব্যক্তি শেষ রাতে ওঠার অভ্যাস নেই, সে রাতের প্রথম অংশে এশার নামাজের পর বিতর পড়ে নেবেন। অথবা এশার পর দুই-চার রাকাত তাহাজ্জুদের নিয়তে নফল আদায় করে বিতের নামাজ আদায় করবেন।
কিছু ভুল ধারণা : ১. লোকমুখে শোনা যায় ‘এ নামাজ আদায় শুরু করলে জিন আসে’ এটি ভিত্তিহীন কথা। ২. এ নামাজ একদিন পড়লে, নিয়মিত পড়তে হয়। এটা জরুরি নয়। নিয়মিত পড়তে পারলে ভালো, না পারলে গুনাহ নেই। ৩. বিতের নামাজের পর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায় না। বরং বিতের নামাজের পরেও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়। ৪. অনেকে বলেন ‘তাহাজ্জুদ নামাজে প্রথম রাকাতে ১১ বার আয়াতুল কুরসি, ২০ বার সুরা ইখলাস, দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস ১০০ বার ইত্যাদি পড়লে এমন এমন নেকি পাওয়া যায়।’ এটাও ভুল কথা। এমন বাধ্যতামূলক নিয়মনীতি কুরআন-হাদিসের কোথাও নেই। তবে লম্বা লম্বা সুরা পড়া বা একাধিক সুরা পড়া অথবা একই সুরা বারবার পড়ার নিয়ম আছে। যত বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা হবে, নেকিও তত বেশি হবে।