বুধবার দিনগত গভীর রাতে সচিবালয়ে আগুন লাগার পর তা নির্বাপণের কাজে থাকা ফায়ার ফাইটার সোহানুর জামান নয়নের নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ট্রাকচালক ও হেলপারকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার শুনানি নিয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম মিনহাজুর রহমান এ আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলো- বেলাল হোসেন ওরফে সুমন (৩৬) ও ফরহাদ (২০)।
নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মীর নাম মো. সোহানুর জামান নয়ন রংপুরের মিঠাপুকুর থানার আটপনিয়া গ্রামের আক্তারুজ্জামানের ছেলে। তাঁর মূল কর্মস্থল সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশন হলেও ঢাকায় এনে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
ট্রাকচালককে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই আমিরুল ইসলাম। আসামিপক্ষে কোন আইনজীবী না থাকায় আদালত শুনানি নিয়ে আদেশ দেন।
কারাগারে আটক রাখার আবেদনে আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্র ও সাধারণ জনতা ঘাতক ট্রাকের ড্রাইভার বেলাল হোসেন ওরফে সুমন ও হেলপার মো ফরহাদকে ট্রাকসহ আটক করে ডিউটিরত থানা পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেয়। আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই না হওয়ার আগে জামিনে মুক্তি দিলে চিরতরে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যাঘাত ঘটবে। মামলাটি সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে মামলার তদন্ত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই না হওয়ায় পর্যন্ত আসামিদের জেলে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন। মামলার তদন্তের স্বার্থে পরবর্তীতে ব্যাপক ও নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসামিদের পুলিশ রিমান্ডে পাওয়ার আবেদন করা যেতে পারে।’
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, ‘তাদের (ট্রাক চালক ও সহকারী) নামে শহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। সকল পক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
এ ঘটনায় বংশালে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সদস্য রুহুল আমিন মোল্লা বৃহস্পতিবার সকালে বাদী হয়ে সড়ক পরিবহন আইনে এ মামলা করেন। মামলায় বেলাল হোসেন ওরফে সুমন ও ফরহাদকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে সচিবালয়ের আগুন লাগে। এসময় খবর পেয়ে তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিস থেকে আমরা ৮ জনের একটি টিম সেখানে যাই। এরপর রাত ৩টা ১০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডেলিভারি হোজ নিয়ে সচিবালয়ের মেইন গেটের সামনে রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় গুলিস্থান জিরো পয়েন্ট থেকে কাওরান বাজারগামী ট্রাকে আসামিরা দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে ফায়ার ফাইটার মো. সোয়ানুর জামান নয়নকে চাপা দেয়। এসময় নয়নের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তাৎক্ষণিক আমিসহ আমাদের সহকর্মীরা উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
বুধবার রাত পৌনে ২টার দিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট সেখানে যায়। আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত ফায়ার ফাইটার নয়ন পানির লাইন দিতে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাক চাপায় গুরুতর আহত হন। তাঁকে চাপা দিয়ে ট্রাকটি পালিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক নয়নকে মৃত ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরে নয়নের জানাজা হয়। এর আগে তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, বুধবার দিনগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিটটি কাজ শুরু করে। আগুনের তীব্রতা বাড়ার কারণে আরও ১৮টি ইউনিট অগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে যোগ দেয়। একই সময়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সেনা ও পুলিশ সদস্যরা।