যদিও ভালবাসা মানে না কোনো সীমান্তের বাঁধা। এ যেন চির শ্যামল নির্মল এক অনুভূতি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এমনি এক অনন্য ভালবাসার গল্প প্রকিপ ও বৃষ্টি আক্তারের। প্রেমের টানে হাজারোও মাইল দূর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে ছুটে এসেছেন ইউক্রেনীয় যুবক অ্যান্দ্রো প্রকিপ। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর বৃষ্টিকে করেছেন বিয়েও। নাম রেখেছেন মোহাম্মদ। এ নিয়ে খুশি পরিবার ও গ্রামবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়। টানা দুই বছরের প্রেম। ধীরে ধীরে সে প্রেম গভীর হতে থাকে। বাধা হয়নি ছয় হাজার কিলোমিটারের পথ। বাধা হয়নি ধর্ম। প্রেমের শেষ পরিণয় বিয়েতে আবদ্ধ হয়েছেন তারা। ইউক্রেনের নাগরিক অ্যান্দ্রো প্রকিপ। নাম বদলে এখন মোহাম্মদ। বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার কালাছড়া গ্রামের বৃষ্টি আক্তারকে। স্বামীর সঙ্গে নাম মিলিয়ে বৃষ্টির নাম এখন বৃষ্টি প্রকিপ। বৃষ্টি কালাছড়া গ্রামের মৃত কামাল মিয়ার মেয়ে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে বৃষ্টি সবার বড়।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সরেজমিনে বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী কালাছড়া গ্রামে দেখা মিলে বৃষ্টি ও প্রকিপের। কথা বলেন তাদের ভালোবাসা নিয়ে। জানালেন বিয়ে করতে পেরে তারা খুশি। সবার দোয়া চান তারা।
কালাছড়া গ্রামের কামাল মিয়ার মেয়ে বৃষ্টি। এসএসসি পাস। অল্প ইংরেজি জানেন। বছর দুয়েক আগে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠান প্রকিপকে। সেই থেকে প্রেমের শুরু। ইউক্রেনীয় যুবক প্রকিপ বর্তমানে পোল্যান্ড বসবাস করেন। তবে পেশাগত কারণে তিনি বেলজিয়ামে থাকেন। গত ১৯ ডিসেম্বর বেলজিয়াম থেকে বাংলাদেশে আসেন প্রকিপ। সেদিনই বিয়ে করেন বৃষ্টিকে।
কথা হলে বৃষ্টি বলেন, প্রথমে তার সঙ্গে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর আমাদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে প্রকিপ আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তাকে আমি বলি প্রেম নয় বিয়ে করতে হবে। এরপর দুই বছর অপেক্ষায় থাকি। অবশেষে সে বাংলাদেশে আসে। পরে তাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করি। পরে আদালত ও সামাজিকভাবে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। প্রকিপ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। আগামী বছর সে আমাকে পোল্যান্ডে নিয়ে জাবে। ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজ চলছে। আমার পরিবারের সবাই খুশি। আমরা সকলের কাছে দোয়া চাই।
প্রকিপ বলেন, বৃষ্টিকে বিয়ে করতে পেরে সে খুব খুশি। বাংলাদেশ তার ভালো লাগছে। শিগগিরই তার স্ত্রীকে নিয়ে যাবেন পোল্যান্ডে। আগামী বছর সে বাংলাদেশে বেড়াতে আসবে। মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে সে অনেক খুশি।
গ্রামবাসী বলেন, আমাদের গ্রামে বিদেশি এক যুবক প্রেমের টানে ছুটে এসেছেন। আমরা অনেক খুশি। সে আশার পর শরীয়াহ মোতাবেক স্থানীয় ইমামের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কালেমা পরিয়ে বৃষ্টির সঙ্গে তাকে বিবাহ দেওয়া হয়। আমরা সবাই তাকে গ্রামের জামাই হিসেবে আপন করে নিয়েছি।
কালাছড়া মসজিদের ইমাম শাইখুল ইসলাম জানান, আদালতের মাধ্যমে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী প্রকিপ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ের করে বৃষ্টিকে। পরে তারা গ্রামে ফিরে এলে সবাই তাদেরকে স্বাগত জানায়। পাশাপাশি প্রকিপ সামাজিকভাবে ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক কালেমা পড়ে বিবাহ সম্পন্ন করে।