ইসলামের বিধানে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অমান্য এবং গোনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া কবর আজাবের অন্যতম কারণ। কোরআন-হাদিসে বিভিন্ন কারণে কবরে আজাব হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে দুটি স্বভাব মানুষের ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়। একটু চেষ্টা করলেই তা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। ওই দুই কারণ হলো-
পরনিন্দা : কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষত্রুটি অন্যের কাছে প্রকাশ করাকে গিবত বা পরনিন্দা বলে। শরিয়তের দৃষ্টিতে গিবত খুবই জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ এবং কবিরা গোনাহ। গিবতের কারণে গিবতকারীকে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দুইটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের তেমন কোনো বড় গোনাহের কারণে এ শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে গিবত করার কারণে এবং অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে- প্রস্রাব করার পর উত্তমরূপে পবিত্র না হওয়ার কারণে।’ এরপর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) খেজুর গাছের একটি তাজা ডালকে দুই ভাগ করে প্রত্যেক কবরের ওপর একটি করে গেড়ে দিলেন। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এমন করলেন কেন? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ডাল দুইটি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত হয়তো তাদের শাস্তি লাঘব হবে।’ -সহিহ বোখারি : ২১৮
প্রস্রাবের পর পবিত্রতা অর্জনে অবহেলা : প্রাকৃতিক প্রয়োজনে প্রতিদিন একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে ৬-৮ বার প্রস্রাব করতে হয়। আর প্রস্রাব করার পর তা থেকে উত্তমরূপে পবিত্র হওয়ার জন্য পানি দিয়ে এর মলিনতা ধুয়ে ফেলতে হবে। অথচ এক্ষেত্রে অনেকে অবহেলা করে থাকে। প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন না করার কারণে কবরে শাস্তি পেতে হয়।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রস্রাবের কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কবরের আজাব হয়ে থাকে। অতএব তোমরা যথাযথভাবে পবিত্রতা অর্জন করো।’ -তাবারানি : ১১১০৪অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা প্রস্রাব থেকে সতর্ক থাকো। কারণ কবরের অধিকাংশ শাস্তি তা থেকে হয়ে থাকে।’ -মুসনাদে আহমাদ : ২৫২এ ছাড়া শিরক করা, মুনাফেকি স্বভাব, নামাজ আদায় না করা, সুদ ও ঘুষ খাওয়া, ঋণ পরিশোধ না করা, ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া, মিথ্যা কথা বলা, হারাম গান-বাজনা করা এবং তা শ্রবণ করা, বিক্রি করার সময় ওজনে কম দেওয়া এবং ক্রয় করার সময় বেশি নেওয়া, উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের পার্থক্য না করা, পশু-পাখি তথা প্রাণিকুলের ওপর দয়া প্রদর্শন না করার কারণেও কবরে আজাব হবে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত জায়েদ বিন সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এ উম্মত কবরে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তোমরা ভয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফন করা ছেড়ে না দিলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যেন তিনি তোমাদেরও কবরের আজাব শুনিয়ে দেন যেভাবে আমি শুনতে পাই।’ অতঃপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর কাছে তোমরা জাহান্নামের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাও।’ -সহিহ মুসলিম : ২৮৬৭
আল্লাহতায়ালা সব মুসলিম নারী ও পুরুষকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করুন।