বাজারে প্রতিদিনই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। চাল থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্যতেল, মাছ-মাংস, ডিমের দাম বেড়েছে অনেক আগেই। খুচরা বাজারে পেঁয়াজ, আদা-রসুন ও মসলাজাতীয় পণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম বাড়ছে হু-হু করে। এর মধ্যে সপ্তাহের ব্যবধানে আটা-ময়দার দাম কেজিতে ৫-৭ টাকা নতুন করে বেড়েছে। আর মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১২-১৪ টাকা। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতার দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে নিম্নআয় ও খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে।
এদিকে শনিবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে-মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজি খোলা আটার দাম ২৮ শতাংশ বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে প্যাকেট আটার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১২.৭৫ শতাংশ। পাশাপাশি প্রতিকেজি খোলা ময়দা মাসের ব্যবধানে ৮.৭০ শতাংশ ও প্যাকেট ময়দা ২.২৭ শতাংশ দাম বেড়েছে। আর বছরের ব্যবধানে প্রতিকেজি আটা ও ময়দা ৬৬.৬৭ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয় হয়ে উঠছে। একাধিক পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গণপরিবহণের ভাড়া বেড়েছে। সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীর তৎপরতা বেড়েছে। এতে মানুষের সার্বিক ব্যয় আরেক দফা বাড়ছে। ফলে সব শ্রেণির মানুষ দুর্ভোগে পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে। তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছে। তাই এই সংকট মোকাবিলায় সরকারি সহায়তার সঙ্গে বাজার তদারকি জোরদার করা প্রয়োজন।’
শনিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজারে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দিন প্রতিকেজি খোলা আটা বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা। যা সাত দিন আগে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকা। আর গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ৩৩ টাকা। প্রতিকেজি প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হয়েছে ৬০-৬২ টাকা। যা সাত দিন আগে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৪ টাকা। আর গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ৩৬ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খোলা ময়দা বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা। যা সাত দিন আগে ও এক মাস আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা।
রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা তন্ময় বলেন, বাজারে পণ্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। চাল কিনতেই অর্ধেক টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। মাছ-মাংসের দামও বাড়তি। এর মধ্যে আটা-ময়দার দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে সব ধরনের পণ্য কিনতে নাজেহাল হতে হচ্ছে। তাই বাজার তদারকি দরকার।
একই বাজারে মুদি বিক্রেতা তুহিন বলেন, পাইকারি পর্যায় থেকে আটা-ময়দার দাম বাড়ানো হচ্ছে। গত এক মাস থেকে আবারও তারা নতুন রেট ধরে দিচ্ছে। বেশি দামে আনতে হয়, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। তবে ক্রেতারা আমাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করে।
রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আমদানিকারক ও কোম্পানি পর্যায়ে আটা-ময়দার দাম আবারও বাড়ানো হচ্ছে। তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে গমের সংকটের সঙ্গে বেড়েছে ডলারের দাম। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পরিবহণ ভাড়ায়। এ কারণেই তারা আটা-ময়দার দাম বাড়াচ্ছে। তবে বিশ্ববাজারে গমের দাম কমছে। পাশাপাশি দেশে তাদের কাছে যে পরিমাণে গম আছে তাতে দাম না বাড়ালেও হয়। কিন্তু তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সচেতনতা অনেক বড় ব্যাপার। তারা যৌক্তিক লাভ করবে এটাই আমরা চাই। কিন্তু কেউ যদি কারসাজি করে এদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের অভিযান টিম প্রতিনিয়ত তদারকি করছে। কিছুদিন পরপর আমরা ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে বসে আলোচনা করছি। পণ্যের দাম নিয়ে কেউ যদি কারসাজি করে তাহলে আমরা ছাড় দিচ্ছি না। প্রয়োজনে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।’