সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি নাজিম উদ্দিনের ছেলে মুরাদ হাসান আসিফ নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি কাউকে না জানিয়ে বিদেশ থেকে দেশে আসেন নাজিম। এ নিয়ে স্ত্রী নাছিমা আক্তারের সঙ্গে তার পারিবারিক কলহ শুরু হয়। একই বছরের ২১ মে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে নাছিমাকে চড় মারেন তার স্বামী। নাছিমাও স্বামীকে পাল্টা ধাক্কা দেন। তখন দরজার চৌকাঠে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নাজিম। এতে মৃত্যু হয় তার। বিষয়টি টের পেয়ে লাশ কম্বল ও তোষক দিয়ে মুড়িয়ে মালামাল ও মুরগির খাবার রাখার ঘরে লুকিয়ে রাখেন। এরপর ঘরের মেঝে থেকে রক্ত মুছে স্বামীর পাসপোর্ট ও আইডি কার্ড পুড়িয়ে ফেলেন নাছিমা। মেয়েরা স্কুল থেকে ফিরে বাবার খোঁজ করলে বলেন, তাদের বাবা ঝগড়া করে বিদেশে চলে গেছেন। প্রতিবেশীদেরও এ কথা জানান। পরে লাশে সুগন্ধি ছড়িয়ে সাতদিন ঘরে লুকিয়ে রাখেন। এবং মেয়েদের কৌশলে নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তিনি। এই সুযোগে লাশ বস্তায় ভরে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে একটি পুকুরে ফেলে দেন নাছিমা। পুকুরে দুর্গন্ধ যুক্ত বস্তা দেখে এলাকার লোকজন ভেবেছিলেন বস্তায় মৃত কুকুর রয়েছে। পরে তারা তা তুলে পাশের ঝোপঝাড় ভর্তি একটি গর্তে ফেলে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই বস্তা ফেটে হাড়গোড় বেরিয়ে এলে তা খেলাধুলো করতে যাওয়া শিশুরা দেখতে পায়। খবর পেয়ে পুলিশ অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এতে পেরিয়ে যায় প্রায় দুই মাস। লাশ উদ্ধারের পরও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তদন্তভার সিআইডির হাতে আসার পর রহস্যের জট খুলতে থাকে। গত রোববার নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী নাছিমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর সোমবার হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি।
সিআইডি চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপার ছত্রধর ত্রিপুরা বলেন, ‘ঋণ নিয়ে স্বামী নাজিমকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন নাছিমা। স্বামী বিদেশ থেকে ফিরে আসায় ক্ষিপ্ত ছিলেন তিনি। কারণ ঋণ শোধ করতে পারেননি নাজিম। আর্থিক টানাপোড়নও ছিল। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে কলহ লেগে থাকতো। কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড।’
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক নাছির উদ্দিন রাসেল জানান, তদন্তে নেমে জানতে পারেন ওই এলাকা থেকে একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক উধাও হন। নাজিম উদ্দিনকে হত্যার পর যার মাধ্যমে মেয়েদের নানার বাড়ি পাঠিয়েছিলেন নাছিমা। আবুল কালাম নামে সেই চালককে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডে নাছিমা জড়িত থাকতে পারে বলে তথ্য পায় সিআইডি। পরে নাছিমা ও দেবর জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন নাছিমা। জসিমের সঙ্গে নাছিমার সুসম্পর্ক রয়েছে। ভাইয়ের লাশ গুমে জসিমের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।