1. newstatini@gmail.com : নিউজ ডেস্কঃ : নিউজ ডেস্কঃ
  2. admin@newstatini.com : unikbd :
শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,
১৩ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সোহাগ হত্যা মামলার এজাহার নিয়ে পুলিশ ‘কারসাজি’ করছে, অভিযোগ স্বজনদের

  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ঢাকার মিডফোর্ড এলাকায় পাথর ছুঁড়ে পৈচাশিকভাবে ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জড়িতদের নাম পুলিশের বিরুদ্ধে সুকৌশলে বাদ দেয়ার অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা।

সোহাগের স্বজনদের অভিযোগ, মামলা দায়েরের আগে এজাহারের জন্য লেখা একটি অভিযোগপত্র পুলিশ তাদের পড়ে দেখার সুযোগ করে দিলেও পরবর্তীতে এজাহারের জন্য যে অভিযোগপত্রে পুলিশ বাদীর স্বাক্ষর নিয়েছে, তাতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তিনজন আসামির নাম বাদ দেয়ার পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন এমন ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, এজাহার পরিবর্তনের সুযোগ নেই। বাদী মামলার জন্য যে অভিযোগ দিয়েছেন, সেটিই পুলিশ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেছে।

নিহত সোহাগের স্বজনরা মামলার এজাহারের জন্য লেখা দু’টি অভিযোগপত্রের কপি সময় সংবাদকে দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি কপিতে ১৭ নম্বর আসামির হিসেবে আঃ লতিফ মোল্লার ছেলে কাইউম মোল্লা (৪৫), ১৮ নম্বর আসামি হিসেবে হাবিবুর রহমান হবির ছেল রাকেশ (৩৫) এবং ১৯ নম্বর আসামি হিসেবে রহিম (৩৬) এর নাম উল্লেখ করা আছে। কিন্তু পুলিশ এজাহার হিসেবে যে অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছে, তাতে এই তিনজনের নাম নেই। এছাড়া মামলার এজাহারের ১৯ নম্বর আসামি জাফর আলী হাওলাদারের ছেলে আনিচুর রহমান হাওলাদারের (৪০) নাম উল্লেখ আছে। কিন্তু আনিচুর রহমান হাওলাদারের নাম মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আগে নিহতের স্বজনদের পড়ে দেখার জন্য যে অভিযোগপত্রটি দেয়া হয়েছিল, তাতে উল্লেখ নেই।

এ বিষয়ে নিহত সোহাগের ভাগ্নি বিথি বলেন, ‘বুধবার যখন এ ঘটনা ঘটে আমরা তা সন্ধ্যায় শুনতে পাই। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রওনা দিয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানায় পৌঁছাই। ওই সময় পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা নেয়া হয়নি। পরে আমার মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলা যখন লেখে ওনারা (পুলিশ) ঠিকঠাক মতোই লেখেন। ১৭, ১৮, ১৯ – এই তিন আসামি ঠিক ছিল। ওইখানের ওসি মনিরুজ্জামান মনির আমাকে মামলার কপিটি পড়তে বলেন। আমাকে একটি কলম দিয়ে তিনি বলেন, যখন যেখানে গ্যাপ, যেটা লাগবে, তোমার যেটা মনে হয়েছে তথ্য লাগবে – তুমি নিজে থেকে সেটা লিখবে, তারপর আমরা সেটা সংশোধন করব।’

বিথি বলেন, ‘আমি তখন চালাকি করে ওই কপিটির ছবি ফোনে তুলে রাখি। এরপর আমি ওই কপিটি পড়ি। এরপর আমি প্রশ্ন করি – যখন আমার মামাকে মারা হয়েছে, তখনতো অস্ত্র ছিল প্রত্যেকের হাতে এবং অস্ত্র দিয়েও আমার মামাকে আঘাত করা হয়ে, সেটা কেন লিখলেন না আপনারা? তখন ওসি বলেন, এটা আমরা সংশোধন করবো। কিন্তু ওনারা আগেই এটা সংশোধন করে রাখছিল ওনাদের নিজেদের মতো। আমার মা প্রথম যে কপিটা ছিল, ওইটায় তার সিগনেচার দিতে হতো, যেহেতু বাদী সে। কিন্তু সিগনেচার ওইটায় না নিয়ে তারা নিজেদের মতো যে সাজানো হয়েছে, তিনটা আসামি ১৭, ১৮, ১৯ নম্বর আসামি, প্রথম যে কপিটা ছিল ওইটা ঠিকঠাক ছিল। দ্বিতীয়বার যেটা রেডি করা হয়েছে, তিনটা আসামির নাম কেটে দেয়া হয়েছে। এবং অন্য যারা এটার সাথে সম্পৃক্তই না, তাদের নাম জড়ানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওইখানে আমার মা না বুঝে সিগনেচারটা করে। এবং যারা মূল হোতা, মূল আসামি – যারা এ ঘটনার সম্পৃক্ত আছে সরাসরি, তাদের না দিয়ে যারা জানেই না কিছু, তাদের দেয়া হয়েছে। এবং মামলাটিকে অনেক হালকা করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এবং মামলা নিতে চাচ্ছিল না। আমার মা বাদী, উনি ঢাকা চলে গেছেন এই মামলার কারণে। অনেক ঝামেলা করতেছে ওনারা (পুলিশ)। যে, ফিফটি ফোর না কি মামলা হয়ে যাবে, আসামি ছাড়া পেয়ে যাবে। চালান করে দেবে – এই বিভিন্ন রকম কথা শুরু করছে। বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে টাইপিং করা হয়েছে। পরের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে সাড়ে এগারোটার সময় কপিটা আমাকে দেয়া হয়। আমি সাড়ে এগারোটার সময় আমার ফোনে ওটা ক্যাপচার করি।’

বিথি বলেন, ‘ক্যাপচার করার পরে তারা এক ঘণ্টা টাইম নেয়। ওনারা আমাদের সবাইকে বের করে দিছে, আমার মাকে একলা রাখছে তাদের রুমে, ওসি সাহেব যে মনিরুজ্জামান মনির ওনার রুমে। ওনার রুমে আরেকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিল। ওনারা আমার মাকে কি বলছে জানি না। আমার মা তো ভাবছে, প্রথম মতো আমি ওইটা চেক করছি, আমার ওপর ভরসা তার, আমিও তো ঠিকঠাক মতো চেক করছি, কিন্তু ওনারা কিছুই সংশোধন করেনি, তারা নিজেদের মতো বক্তব্য দিয়ে আমার মায়ের হাত থেকে সিগনেচার রাখছে।’
 
এ বিষয়ে নিহত সোহাগের বোন ও হত্যা মামলার বাদী মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘ভাই মারা যাওয়ার কারণে আমার হিতাহিত জ্ঞান ছিল না। আমি কপিটি আমার মেয়েকে দেখিয়েছি। আমি যখন সই করেছি, তখন মনে করেছি, আসামির নাম আছে। কিন্তু পরে দেখা গেল যে, না – আসামির নাম নাই। এখানে একটা পলিটিক্স করা হয়েছে। ওখানে যারা প্রকৃত দোষী, তিনজনই বাদ পড়েছে। যারা মেইন হোতা, ওরাই বাদ পড়ছে। আমার মেয়ে যে কাগজটা দেখেছে, ওটায় স্বাক্ষর নেয়নি। নিয়েছে অন্য আরেকটি কাগজে স্বাক্ষর। আমি তো এটা বুঝতে পারিনি। এটা নিয়ে এরকম ছয়-চারি হবে, তা বুঝতে পারিনি, এজন্য সই করে দিছি। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর আমরা ফোনে কথা বলেছি। এরপর ঢাকা গিয়ে আমি আবার সরাসরি কথা বলে এসেছি। এটা ঠিক করে দেবে, আমাকে আশ্বাস দিয়েছে তারা (পুলিশ)। এখানে নির্দোষী লোক আছে, আর দোষী যারা তাদের নাম নাই। মামলার এজাহার লিখেছে তারা (পুলিশ)।’
এ বিষয়ে ঢাকার কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘এজাহারতো তারা দিয়েছে, এজাহার কি আমরা করছি? এজাহার চেঞ্জ করার কোন সুযোগই নেই। তারা যেটা এজাহার দিয়েছে, আমরা সেটাই মামলা রেকর্ড করেছি। তারা কি অশিক্ষিত? তারা কি মূর্খ? কিছুই নয়। আন্দাজে একটা কথা বলে। তারা শিক্ষিত, তারা ১০ জন, ২০ জন আসে একসাথে দেখতে। এখন এটা বললে হবে? এমনতো নয় যে, তারা অশিক্ষিত মানুষ, পড়েনি, দেখেনি। তারা পড়ছে, দেখছে, সব জেনেশুনে তাদের বক্তব্য মতো সেটা এজাহার করছে। এখানে আমাদের কিছু বলার নাই। আর আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দেখে সমস্ত আসামি শনাক্ত করছি, ধরার চেষ্টা করছি।’
 
শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়, চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে সোহাগ হত্যার তথ্য মিলেছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার জসীম উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত চাঁদাবাজির কোনো বিষয় আমাদের জানা নাই। আমরা শুধু জেনেছি, এটা পারস্পরিক একটা দ্বন্দ্বের বিষয়। এই ব্যবসাটা (ভাঙারির ব্যবসা) তারা কিছুদিন একসঙ্গে করেছে। কিন্তু এক পর্যায়ে ব্যবসার লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্বের ফলশ্রুতিতে এই হত্যাকান্ডটি ঘটেছে।

এর আগে সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে এলিট ফোর্সটির মহাপরিচালক এ. কে. এম শহিদুর রহমান জানান, সোহাগ হত্যার ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব। এছাড়া মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।।

এদিকে সোহাগ হত্যায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজন একটা ঘটনা। এটার জন্য আমরা অলরেডি পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। আমাদের ডিবির টিম বাকিদের ধরার জন্য কাজ করছে।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪
Developed By UNIK BD