1. newstatini@gmail.com : নিউজ ডেস্কঃ : নিউজ ডেস্কঃ
  2. admin@newstatini.com : unikbd :
শনিবার, ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,
২০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনামঃ

*বিদেশে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আফ্রিদি

  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫
এবার বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘মাই টিভি’র চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির অপকর্মের শেষ নেই। রিমান্ডে আফ্রিদিকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে বলে জানিয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির ভাষ্য, বাবা-ছেলের অপকর্মের তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছে তারা। বিশেষ করে পতিত সরকারের বেশ কজন মন্ত্রী-এমপিকে ম্যানেজ করে, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ‘মাই টিভি’ দখল করার বিষয়টি তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে। তদন্তে অবৈধ উপায়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা বাবা-ছেলের অনেক কুকীর্তির তথ্যও মিলছে।

অফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথী বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হয়ে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। আফ্রিদিকে জিজ্ঞাসাবাদে পতিত সরকারের সময় তাঁর বাবা ও তাঁর অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান সিআইডির এক কর্মকর্তা। ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় একসময় নিজেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ভাবতে শুরু করেন ‘ব্যাডবয়’ তৌহিদ আফ্রিদি।

কখনো রাত-বিরাতে মন্ত্রীদের সঙ্গে চলাফেরা, কখনো আবার মন্ত্রী-এমপিদের ছেলেমেয়ের সঙ্গে আড্ডা। মন চাইলে বিপুল অর্থের বিনিময়ে  শোবিজের উঠতি নায়িকাদের সঙ্গে ফুর্তি করতেন। বিদেশে গিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ভ্রের শীর্ষ অপরাধীদের সঙ্গে দেখা করতেন। তবে গত বছর ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর এসব অপকর্মের ভয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে দেশেই পালিয়ে ছিলেন তাঁরা। আর আফ্রিদি ও তাঁর বাবা বিদেশে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, তাঁদের কাছে তথ্য রয়েছে, নাসির উদ্দিন সাথী মাই টিভির প্রকৃত মালিক নন। বিলকিস জাহান নামের এক নারীর কাছ থেকে জাল-জালিয়াতি ও পেশিশক্তি দেখিয়ে মাই টিভি দখল করে নেন। পতিত সরকারের কজন মন্ত্রী ও নেতার সহযোগিতায় নাসির উদ্দিন সাথী প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। বাবার সহযোগিতায় ছেলে আফ্রিদিও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এরপর বাবা-ছেলে নানা অপকর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের জিম্মি করে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ। সিআইডির ওই কর্মকর্তা আরো জানান, বাবা-ছেলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাই টিভির আগের কর্ণধার বিলকিস জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। বিলকিস জাহান গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, চ্যানেলটি প্রতিষ্ঠার পরই তাঁর কাছ থেকে অবৈধভাবে সেটি দখল করে নেন তাঁরা। টিভি চ্যানেল দখলের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আফ্রিদি জানান, এটা তাঁর বাবা জানেন। তাঁর জানা নেই।

সিআইডির ওই কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আফ্রিদি ও তাঁর বাবার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব যাচাই-বাছাই করে সত্যতা মিললে বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করা হবে।

২০১৫ সালে ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে যাত্রা শুরু তৌহিদ আফ্রিদির। অনেক নায়িকা ও মডেলের সঙ্গে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করতেন অফ্রিদি। অনেক ছবিতে তাঁদের রোমান্টিক ভঙ্গিতে দেখা যেত। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে তাঁর ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়।

সিআইডি বলছে, তৌহিদ আফ্রিদি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। গত বছর ১ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি করেন মো. জয়নাল আবেদীন নামের এক ব্যক্তি। মামলায় তৌহিদ আফ্রিদি ও তাঁর বাবা নাসির উদ্দিন সাথীসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এজাহারনামীয় ১১ নম্বর আসামি তৌহিদ আফ্রিদি।

সিআইডি বলছে, এরই মধ্যে আফ্রিদির কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল, হার্ডডিস্ক ও ম্যাকবুক (তিনটি ডিভাইস) ডিভাইসের ফরেনসিক পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। এতে তাঁর অপরাধ জগতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান জানান, আফ্রিদির অপকর্মের শেষ নেই। তদন্তে তাঁর অপকর্মের অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সিআইডি বলেছে, অপরাধ জগতে আফ্রিদির শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। ভুক্তভোগীরা ওই সিন্ডিকেটের নাম দিয়েছে ‘গিভ অ্যান্ড টেক সিন্ডিকেট’। কেউ ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মুখ খোলার চেষ্টা করলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি কিংবা গুমের ভয় দেখানো হতো।

গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে তৌহিদ আফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত এক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর মুখোশের আড়ালে তাঁদের অপরাধ জগতের রহস্য উন্মোচিত হতে শুরু করে। জানা যায়, তৌহিদ আফ্রিদি ছিলেন সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্রের মধ্যমণি। সিআইডির ভাষ্য, পতিত সরকারের আমলে নারী সরবরাহ, চাকরি বাণিজ্য, মাদক কারবারসহ অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন তৌহিদ আফ্রিদি। ভুক্তভোগীরা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। সিআইডি বিষয়টি তদন্ত করছে।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪
Developed By UNIK BD