এবার আমেরিকায় চলছে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাটডাউন। এর ফলে বাজেট সংকটে সরকারি কাজকর্মে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এবার এর প্রভাব পড়তে যাচ্ছে দেশটির বিমান চলাচলে। মার্কিন পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ৪০টি প্রধান বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হবে।
এর ফলে বাতিল হবে হাজার হাজার ফ্লাইট। তবে এ সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোর জন্য প্রযোজ্য। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কংগ্রেসে বাজেট অনুমোদন না হওয়ায় ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণকারী থেকে শুরু করে পার্ক রেঞ্জার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় ১৪ লাখ কর্মী কেউ বেতন ছাড়া কাজ করছেন, কেউ বা বাধ্যতামূলক ছুটিতে আছেন।
বিবিসি জানায়, এ সিদ্ধান্তের ফলে আটলান্টা, নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডিসির প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে প্রভাব পড়বে।
এক বিবৃতিতে মার্কিন পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি বলেন, ‘আমাদের প্রধান কাজ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটি রাজনীতির বিষয় নয়, বরং তথ্য বিশ্লেষণ করে ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা। কারণ ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণকারীরা এখনো বেতন ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছেন।’
কর্মীদের ইউনিয়নগুলো জানিয়েছে, অনেকেই মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কিংবা অন্য চাকরিতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
আমেরিকার অনেক সরকারি সংস্থা কংগ্রেস থেকে অনুমোদিত বার্ষিক তহবিলের ওপর নির্ভর করে। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন সংস্থাগুলো তাদের বাজেট চাহিদা জমা দেয়। কংগ্রেস তা অনুমোদনের পর প্রেসিডেন্ট সেটিতে সই করেন পরবর্তী অর্থবছরের জন্য।
গত ১ অক্টোবর আমেরিকায় নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস অর্থছাড়ে সম্মতি না দেওয়ায় শুরু হয় শাটডাউন। ফলে অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়— এর মধ্যে অনেক জরুরি সেবাও রয়েছে।
মূলত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের মতবিরোধের কারণেই শেষ পর্যন্ত শাটডাউন এড়ানো যায়নি।
এফএএ প্রধান ব্রায়ান বেডফোর্ড বলেন, ‘এটি অস্বাভাবিক। শাটডাউন যেমন অস্বাভাবিক, তেমনি আমাদের কর্মীরা যে এক মাস ধরে বেতন ছাড়াই কাজ করছেন—এটিও অস্বাভাবিক।’
ফ্লাইট কমানোর এই প্রক্রিয়া কার্যকর হবে কয়েক ধাপে। শুরুতে কমানো হবে চার শতাংশ, যা কার্যকর হবে শুক্রবার। এরপর ১১ নভেম্বর ছয় শতাংশ, ১৩ নভেম্বর আট শতাংশ এবং ১৪ নভেম্বর ১০ শতাংশ ফ্লাইট কমবে।
ইতোমধ্যে ৪০টি বিমানবন্দরের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যেসব বিমানবন্দরে ফ্লাইট কমছে, সেগুলো দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত শহরগুলোর মধ্যে অবস্থিত। প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার ফ্লাইট বাতিল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে রয়েছে হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা, নিউ ইয়র্ক জন এফ কেনেডি, শিকাগো ও’হেয়ার, রোনাল্ড রিগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এবং লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এই সিদ্ধান্তের আওতায় আসবে না।
উত্তর আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান সংস্থা আমেরিকান এয়ারলাইনস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে আরও তথ্যের অপেক্ষায় আছে। তবে এয়ারলাইনসটির আশা, তাদের যাত্রীদের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
ডেল্টা এয়ারলাইন্স বিবিসিকে জানিয়েছে, তাদের অধিকাংশ ফ্লাইট নির্ধারিত সূচিতেই চলবে