1. newstatini@gmail.com : নিউজ ডেস্কঃ : নিউজ ডেস্কঃ
  2. admin@newstatini.com : unikbd :
শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,
২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনামঃ

ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন সমীকরণ, শেখ হাসিনাকে নিয়ে ৪ বিকল্প

  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে নয়াদিল্লির স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করে চলেছিলেন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি ভারতেই আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে জটিল কূটনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। ঢাকা প্রত্যর্পণ চাইছে, কিন্তু দিল্লি তাতে কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে সাজা কার্যকর প্রায় অনিশ্চিত।

‘মানবিক দিক বিবেচনায়’ শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। কিন্তু এখন তাদের হিসেব করতে হচ্ছে- পুরোনো মিত্রের জন্য ঠিক কতদূর পর্যন্ত এগুবে। কিংবা এর জন্য তারা কতটুকু কূটনৈতিক মূল্য চুকাতে প্রস্তুত।

ভারতের সামনে এখন চারটি বিকল্প আছে বলে মনবে করেন দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান। সেগুলো হলো- ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করতে পারে। কিন্তু এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা দিল্লি মোটেও নিতে চায় না। দ্বিতীয় পথ হলো- বর্তমান অবস্থান বজায় রাখা। কিন্তু আগামী বছর নতুন সরকার দায়িত্ব নিলে এটি দিল্লির জন্য আরও অস্বস্তি বয়ে আনবে। আর তৃতীয় বিকল্প হতে পারে শেখ হাসিনাকে চাপ দেওয়া। যেন তিনি নীরব থাকেন, কোনও বিবৃতি বা সাক্ষাৎকার না দেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা এখনও আওয়ামী লীগের প্রধান। ফলে নীরব থাকার প্রস্তাবে তার রাজি হওয়ার সম্ভাবনা কম। দিল্লিও এমন প্রস্তাব চাপিয়ে দেবে বলে মনে হয় না। সবশেষ বিকল্পটি হলো, তৃতীয় কোনও দেশে পাঠানো। কিন্তু এটিও সমস্যামুক্ত নয়। আইনি ও নিরাপত্তার জন্য ঝামেলাপূর্ণ অতিথিকে গ্রহণ করতে খুব কম দেশই রাজি হবে।’

কুগেলম্যানের ভাষায়, ‘ভারত অনেক সময় গর্ব করে বলে, তারা তাদের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যায় না। শেখ হাসিনাও ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল উভয়ের কাছেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ফলে প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা আপাতত চিন্তার বাইরে।’

ভারতের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার। ভারতের রফতানি বাণিজ্যের কেন্দ্রও রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর দুই দেশের মোট বাণিজ্য ছিল প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে বাংলাদেশও ভারতের কাঁচামাল, জ্বালানি ও ট্রানজিট রুটের ওপর নির্ভরশীল। গত এক দশকে ভারত ৮-১০ বিলিয়ন ডলারের নমনীয় ঋণ দিয়েছে। কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ রেলপথ স্থাপন হয়েছে। ভারতীয় গ্রিড ও বন্দর থেকে বিদ্যুৎ, তেল ও এলএনজি সরবরাহ হয়েছে। তাই এমন সম্পর্ক কেউই সহজে ছিন্ন করতে চাইবে না।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সঞ্জয় ভরতদ্বাজ বলেন, ‘নদীর পানি, বিদ্যুৎসহ নানা ক্ষেত্রে দেশ দুটি জটিল পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ। আবার ভারতের সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশের স্বাভাবিকভাবে চলাটা কঠিন।’

অনেকের ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকার বহির্বিশ্বে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক সমন্বয়ে বেশ তৎপর। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের শাসনের প্রথম কয়েক মাসের কূটনৈতিক উদ্যোগগুলোতে এই ধারা লক্ষ্য করা গেছে। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের রাজনীতি বিশ্লেষক বিয়ান সাইয়ের মতে, এই উদ্যোগগুলোতে ‘ভারতকেন্দ্রিক নীতি’ বর্জনের বিষয়টিও চোখে পড়ার মতো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল শেখ হাসিনার বিষয়টি সামলানোই ভারতের মূখ্য চ্যালেঞ্জ নয়। আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ দমন থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (সেভেন সিস্টার্স) সঙ্গে যোগাযোগ বহাল রাখার জন্যও তাদেরকে প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখতে হবে।

নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে

লন্ডনের এসওএএস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক অধ্যয়নের শিক্ষক অবিনাশ পলিওয়াল। তিনি বলছেন, ‘ভারতের তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। ঢাকার মূল রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে ধৈর্য্য নিয়ে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া উচিত।’

অবিনাশ পলিওয়াল মনে করেন, ‘আগামী ১২-১৮ মাসে সম্পর্ক অস্থির থাকতে পারে। তবে এর তীব্রতা নির্ভর করবে আগামী বছর নির্বাচনের পর দেশটিতে কী কী ঘটনা ঘটে সেটির ওপর। যদি অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করতে সক্ষম হয় এবং নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে, তাহলে দুই পক্ষের জন্য সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ বাড়বে।’

তবে মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন, ‘যেকোনও সম্পর্কে সংকট তৈরি হওয়াটা প্রত্যাশিত নয়। তবে আমার অনুমান হলো, এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়েও নড়বড়ে থাকবে।’

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪
Developed By UNIK BD