এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ আট দলের মধ্যে চলমান আসন সমঝোতা প্রক্রিয়া শেষ মুহূর্তে এসে জটিলতায় পড়েছে। সংশ্লিষ্ট লিয়াজোঁ কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করলেও একক প্রার্থী নির্ধারণে এখনো কোনো চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।
সূত্র জানায়, চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন এবং মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আসন চাহিদা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় মূলত এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি কাঙ্ক্ষিত আসন না পেলে সমঝোতা প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আলাদা প্ল্যাটফর্ম গঠনের আভাসও দিয়েছে দল দুটি।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় রয়েছে—এ ধরনের উদ্যোগের পেছনে কোনো বিশেষ মহলের আশ্বাস থাকতে পারে।
আট দলের এই টানাপোড়েনের মধ্যে নতুন করে আলোচনায় এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিতে দলটি অন্তত ৫০টি আসনের প্রত্যাশা করছে বলে জানা গেছে। এনসিপি যুক্ত হলে অন্যান্য দলকে আরও ছাড় দিতে হবে—এ নিয়ে নতুন করে সমীকরণ জটিল হয়ে উঠেছে।
সূত্রগুলো বলছে, সব মিলিয়ে জামায়াতকেন্দ্রিক এই নির্বাচনি সমঝোতা প্রক্রিয়ায় নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে—
-
জামায়াতে ইসলামী
-
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
-
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
-
খেলাফত আন্দোলন
-
নেজামে ইসলাম পার্টি
-
জাগপা
-
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)
-
আরও কয়েকটি ইসলামী দল
এই জোটের লক্ষ্য ইসলামী দলগুলোর ভোট এক বাক্সে এনে সরকার গঠনের পথে এগোনো। তবে শেষ মুহূর্তে এসে সেই উদ্যোগ অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে—
-
ইসলামী আন্দোলন শতাধিক আসন দাবি করছে,
-
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চাইছে কমপক্ষে ২৫–৩০টি আসন,
-
খেলাফত মজলিসের অপর অংশও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন দাবি করেছে।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী নিজে অন্তত ২০০ আসনে নির্বাচন করতে চায়। অন্যদের চাহিদা পূরণ করতে গেলে জামায়াতের আসন সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে—এ নিয়েই মূলত দ্বন্দ্ব।
তবে আট দলের সমন্বয়ক ও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ দাবি করেছেন, সমঝোতা প্রক্রিয়া ভালোভাবেই এগোচ্ছে।
তিনি বলেন,
“জামায়াতের কাছে কোনো আসন নেই, আসন সবার। আট দলের সবাই ছাড় দেবে, সবাই মিলেই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাব।”
তিনি আরও জানান, এনসিপিসহ আরও ডজনখানেক দলের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে এবং খুব শিগগিরই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন,
“আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। এনসিপিকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আরও কিছু দল যুক্ত হতে চাচ্ছে, তাই সময় লাগছে।”
তিনি দাবি করেন, এখনো কোনো জটিলতা বা বিকল্প সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব বা চাপ আছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,
“কয়েকদিন আগে বিএনপি যোগাযোগ করেছে। তারা বলেছে, তাদের দরজা খোলা। তবে আমরা যেহেতু একটি ঘোষণা দিয়েছি, সেটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের।”
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এক শীর্ষ নেতা জানান,
“আমরা ঐক্য অটুট রাখতে চাই, তবে তা হতে হবে সম্মান ও মর্যাদা বজায় রেখে। এজন্য জামায়াতকেই বেশি ছাড় দিতে হবে। সম্মানজনক সমাধান না হলে বিকল্প চিন্তা আসবে।”
দলটির মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন,
“২৭ তারিখ পর্যন্ত আলোচনা করার সময় আছে। কিছু আসনে সমঝোতা হয়েছে, বাকিগুলো মনোনয়ন জমার পরও হতে পারে। ঐক্য ভাঙার আশঙ্কা দেখি না।







