মধুমাস চৈত্রের ঋতু বসন্ত। মধ্যযুগের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বলেছেন, ‘মধুমাসে মলয় মারুত মন্দ মন্দ। মালতীর মধুকর পিয়ে মকরন্দ।’ অর্থাৎ- মধুমাসে মৃদুমন্দ বাতাস বয়, মৌমাছিরা ফুলের মধু খায়। প্রকৃতির মতো মানুষের মনেও এ সময় নতুন করে জাগে আনন্দভাব। এ ভাব প্রণয়ের। বৈষ্ণব পদাবলিতে বিদ্যাপতি, চ-ীদাসের মতো কবিরা এ ঋতু ঘিরে প্রেমরসের কবিতা লিখেছেন।
বসন্ত ভালোবাসার ঋতু। অনুভব আর আবেগের ঋতু। পশ্চিমের ভ্যালেনটাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবসের ধারণা এসে মিলেছে আমাদের বসন্তে। বাংলা একাডেমি পঞ্জিকা সংশোধনের পর এখন পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে উদযাপিত হয়।
বসন্ত শুধু প্রেমের ঋতুই নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির দ্রোহের ইতিহাসও। এমনই এক বসন্তে বাঙালি ভাষার জন্য আন্দোলন করেছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল ৮ ফাল্গুন। সেদিন মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে জীবন দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছিল বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন আর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। সেদিক থেকে দেখতে গেলে বসন্তে রোপিত হয়েছিল বাংলাদেশের জন্মের বীজ। তেমনি আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল এক বসন্তে। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিয়েছিলেন জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীরা। সেই আন্দোলনের পথ বেয়ে নব্বইয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল গণতন্ত্রের স্বাদ।
বরাবরের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নামবে তারুণ্যের ঢল। প্রেম ও বিদ্রোহের মিশেলে দিনটিকে বরণ করতে শাহবাগের ফুলের দোকান আর আজিজ মার্কেটের শাড়ি ও পাঞ্জাবির দোকানে গত কয়েক দিন ধরে দেখা গেছে ভিড়। ফুল, কার্ড, চকলেট বিনিময়ের পাশাপাশি কবিতা ও ছন্দমিশ্রিত বার্তায় আজ ভরে যাবে মুঠোফোনের ইনবক্স; ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে থাকবে গহিন পরানের উষ্ণতা। টিএসসি, চারুকলা, শিল্পকলা একাডেমি, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বলধা গার্ডেন, বেইলি রোডের ফাস্টফুডের দোকান, ধানমন্ডি লেক ও রবীন্দ্র সরোবরে ছড়িয়ে থাকবে ভালোবাসা ও বসন্তের মিছিল। রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে আজ বসন্ত উদযাপন করবে। এবারের বসন্ত নতুন জীবনীশক্তিতে প্রকৃতি ও প্রাণকে ভরিয়ে তুলুক। বসন্তের দোলা লাগুক বনে, মনে। উল্লসিত মন গেয়ে উঠুক- ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।