এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের লক্ষ্মী মাঝির বড়শিতে তিন দিন আগে বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড এলাকায় মাছ দুটি ধরা পড়ে। শনিবার দুপুর ২টার দিকে মহিপুর মৎস্য বন্দরে বিক্রির জন্য তোলা হয়।
লক্ষ্মী মাঝি বলেন, ‘কুতুবদিয়া ফিশের মালিকানাধীন এফবি মায়ের দোয়া ট্রলার নিয়ে ১০-১২ জন জেলে বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড এলাকায় মাছ ধরতে যাই। এরপর সাগরে হাজারি বড়শি ফেলি। ছয়-সাত ঘণ্টা পর বড়শি তুললে অন্য মাছের সঙ্গে বড় আকারের দুটি পোয়া মাছ উঠে আসে। শনিবার দুপুরে মাছ দুটি বিক্রির জন্য মহিপুর মৎস্য বন্দরে নিয়ে আসি এবং এক লাখ ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।’
এই জাতের মাছ সুস্বাদু এবং অনেক দামি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সচরাচর এই মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না। এটা ভাগ্যের ব্যাপার। কয়েক বছর আগে এই রকম আরও একটা বড় মাছ পেয়েছিলাম।’
মহিপুর মৎস্য বন্দরের কুতুবদিয়া ফিশের মালিক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সাগর থেকে ফেরার পর লক্ষ্মী মাঝি মাছ দুটি নিয়ে আমার আড়তে আসেন। সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা কেজি দরে এক লাখ ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ছোট আকারের কালো পোয়াটির ওজন ছিল ৯ কেজি এবং বড় আকারের মাছটির ওজন ছিল ১৪ কেজি ৬৫০ গ্রাম। দুটি মাছ মিলিয়ে মোট ওজন হয়েছে ২৩ কেজি ৬৫০ গ্রাম। মাছগুলো কিনে নেন মহিপুর মৎস্য বন্দরের ভাই ভাই ফিসের মালিক মো. সেলিম।’
মো. সেলিম বলেন, ‘বিদেশে পোয়া মাছের চাহিদা প্রচুর। আমাদের কাছে সবসময় বড় মাছের অর্ডার থাকে, আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাছ পাঠাই। তাই মাছ দুটি লাভের আশায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা কেজি দরে কিনেছি। ঢাকায় পাঠাবো। আশা করছি, যে দামে কিনেছি, তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবো।’
সমুদ্রের নীল অর্থনীতি ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইকোফিশ-২ অ্যাকটিভিটির পটুয়াখালী জেলার সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ‘কালো পোয়াকে সমুদ্রের স্বর্ণ বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে প্রোটোনিবিয়া ডাইকেনথাস (Protonibea Diacanthus)। ইংরেজি নাম ব্ল্যাকস্পটেড ক্রোকার (Blackspotted Croaker)। এটি মূলত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বেশি পাওয়া যায়। মাছটি বাংলাদেশ উপকূলের সেন্টমার্টিন চ্যানেলেও বেশি পাওয়া যায়। এই মাছের বায়ুথলি সাধারণত ইউরোপসহ হংকং, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে রফতানি হয়। বায়ুথলি থেকে বিশেষ ধরনের সার্জিক্যাল সুতা ও আইসিনগ্লাস (Isinglass) তৈরি করা হয়। মাছটি সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ মিটার লম্বা ও ওজনে ৪৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।’
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘গভীর সাগরে এই জাতের মাছ পাওয়া যায়। খেতে সুস্বাদু। এই মাছের ফুলকা বিদেশে রফতানি করা হয়, যা দিয়ে সার্জিক্যাল সুতা তৈরি করা হয়।’