সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশ করে অপকর্ম চালিয়ে যাওয়া এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।
গ্রেপ্তাররা হলেন—শহিদুল ইসলাম মুন্না, রাসেল খান, মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুর রশিদ ও সোহেল চন্দ্র। দিনাজপুর, বাগেরহাট ও নারায়ণগঞ্জ থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তদের মধ্যে দুজন কম্পিউটার অপারেটর, একজন স্থানীয় একটি গার্মেন্টের কর্মী এবং অন্য দুজন পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজে নিয়োজিত।
ডিবি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চক্রটি তিন হাজার থেকে চার হাজার জন্ম সনদ করেছে।
।ডিবি সূত্র জানায়, ফেসবুকে দেখা যায়, এনআইডি হেল্প ডেস্ক গ্রুপ এবং এনআইডি অনলাইন সার্ভিস নামের গ্রুপে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা কললিস্ট, এমএমএস লিস্ট, নাম্বার টু এনআইডি, এনআইডি টু নাম্বার, লাস্ট কল লোকেশন ও রেডিও লোকেশন তথ্য এবং অন্যান্য অনুলিপি টাকার বিনিময়ে প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো সিম নাম্বার থেকে তার রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত তথ্য, এনআইডি সার্ভার কপি, এনআইডি সত্যায়িত করা, সার্টিফিকেট সত্যায়িত করা, জন্ম নিবন্ধন ও বিভিন্ন নাগরিক তথ্য সংশোধনের সুবিধাদি টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করার বিষয়ে পোস্ট করা হচ্ছে। এটা দেখার পর এই চক্রের পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়।
গ্রেপ্তার আব্দুর রশিদ দিনাজপুরের বিরল পৌরসভার কম্পিউটার অপারেটর ও সোহেল চন্দ্র বিরলের ১০ নম্বর রানীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর। তাঁরা মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সচিবের জন্ম নিবন্ধনের প্রবেশাধিকার (অ্যাকসেস) ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনপত্র দিয়ে আসছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের দালাল হিসেবে কাজ করতেন মোস্তাফিজুর, মুন্না ও রাসেল। গ্রেপ্তারকৃতরা স্থানীয় নাগরিকের পাশাপাশি কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের বিরলের অধিবাসী দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ সরবরাহ করে আসছিলেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পারে, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের চক্রের সদস্য রয়েছে, যাঁরা পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায় ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করে দিয়েছে।
এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, এ রকম জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে অনেক ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে, যাতে ব্যাংক লোন ও অনলাইন অপরাধে পুলিশকে ফাঁকি দিতে পারে।
বিরল পৌসভার মেয়র সবুজার সিদ্দিক সাগর বলেন, ‘হঠাৎ জেনেছি, আমাদের আব্দুর রশিদকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে ঢাকা থেকে আসা ডিবির একটি দল। কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানি না। তবে শুনতে পাচ্ছি, তারা রোহিঙ্গাদের ভুয়া জন্ম সনদ দিয়েছে।’
এদিকে বিরল উপজেলার ১০ নম্বর রানীপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল্লামা আজাদ ইকবাল লাবু বলেন, ‘শুনেছি ডিবি পুলিশ এসে রোহিঙ্গাদের জন্ম সনদ দেওয়ার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা সোহেল চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। কেউ এখনো আমাদের কাছে কিছু জানতে চায়নি।’