কিন্তু তার সেই শখ আর পূরণ হলো না। রাজধানীর দক্ষিণখান থানার তোফাজ্জল চেয়ারম্যানের বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী হত্যার ঘটনায় ঘাতক এস এম ওয়াহিদ হোসেন ওরফে পুলককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এনিয়ে বিস্তারিত জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, নিহত নিরাপত্তাকর্মী বিভিন্ন সময় পুলককে চর থাপ্পড় দিতো। এর প্রতিশোধ নিতেই সে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। বাবা মারা যাওয়ায় পারিবারিকভাবে অবহেলার শিকার পুলক সিরিয়াল কিলিংয়ের পরিকল্পনা করে। যার অংশ হিসেবে নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা করে।
শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ডিবি প্রধান আরও জানান, ছোটবেলায় বাবা হারিয়ে চাচাদের হাতে নির্যাতন ও নিরাপত্তাকর্মীর হাতে চড় থাপ্পড় খেতো পুলক। ফলে তার মধ্যে একটা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়া তার ভেতরে একটি বিকৃত ইচ্ছার জন্ম হয়।
দক্ষিণখানসহ উত্তরা এলাকার ত্রাস সৃষ্টি করতে সিরিয়াল কিলিংয়ের পরিকল্পনা করে। তার টার্গেট ছিলো ৯টা হত্যা করা। যার প্রথমটি হলো আফিল মিয়া। সে যদি হত্যা করতে পারে তাহলে সন্ত্রাসী হিসেবে মানুষ চিনবে। বডি গার্ড থাকবে। তার কথায় মানুষ উঠবে বসবে।
অর্থাৎ রসু খাঁ, এরশাদ শিকদারের মতো বড় সন্ত্রাসী হওয়ার ইচ্ছা ছিলো তার। একথা তার মাকেও বলেছে। আফিলকে হত্যার আগে ইয়াবা সেবন করে পুলক। এরপর তাকে হত্যা করে। আর ইয়াবা সেবনের বিষয় পুলক বলেছে, ইয়াবা সেবন করলে যে পিনিক হয়, মানুষ হত্যা করে তার চেয়ে বেশি পিনিক পেয়েছি।
ডিবি প্রধান বলেন, ইয়াবা খাওয়ার চেয়েও নাকি মানুষ হত্যা বেশি নেশা ওয়াহিদের। হঠাৎ তার মনে বাসনা জাগে সন্ত্রাসী হওয়ার। তার চিন্তা ছিল খুন করলে এলাকার মানুষ তাকে ভয় পাবে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন ডন হতে চেয়েছিলেন তিনি। তার ভেতরে একটি বিকৃত ইচ্ছার জন্ম হয়।
আফিল মিয়া ১৭ মার্চ রাতে প্রতিদিনের মতো নাইট ডিউটির উদ্দেশ্যে দক্ষিণখান বাজার এলাকায় যায়। তার স্ত্রী খোরশেদা ১৮ মার্চ জনৈক রাকিবুলের মাধ্যমে জানতে পারেন তার স্বামীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দক্ষিণখান চেয়ারম্যান বাড়ি জামে মসজিদের সামনে থেকে প্রথমে কাছেই কে.সি. হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেখান থেকে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় খোরশেদা দক্ষিণ খান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তদন্তে নেমে হত্যায় জড়িত এক ঘাতককে গ্রেপ্তার করে ডিবি উত্তরা বিভাগ।
ডিবি ঘটনাস্থল দেখে আফিলের সহকর্মী নাইট গার্ডদের তালিকা সংগ্রহ করে কথা বলে। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত এস এম ওয়াহিদ হোসেন পুলককে শনাক্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার দক্ষিণখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।