গোনাহ বর্জন
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘অনেকে রোজার দ্বারা ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত ছাড়া অন্য কিছুই লাভ করে না। অন্য এক হাদিস শরিফে বলেন, ‘যে গর্হিত কথাবার্তা এবং পাপ কাজ পরিত্যাগ করতে পারে না, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার তার খাবার এবং পানীয় ত্যাগ করায় কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, তার রোজা গ্রহণীয় নয়।
সবরকম গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এর মধ্যে আর একটি ভয়াবহ গোনাহ হোলো গীবত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের যুগে দুই মহিলা রোজা রাখল। রোজায় তাদের এত কষ্ট হলো যে, তারা মৃত্যুর মুখোমুখি হলো। রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিষয়টি জানানো হলে তিনি তাদের কুলি করতে বললেন। তারা কুলি করলে তাদের মুখ থেকে ছোটো গোস্তের টুকরা বের হলো। তারা আশ্চর্য হয়ে বলল, আমরা তো কোনো পানাহারই করিনি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন, মূলত তোমরা রোজা রেখে অন্যের গীবত করেছ। আর গীবত হোলো মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া।
অন্যান্য গোনাহ
আসুন এই রোজায় সমস্ত গোনাহ থেকে তওবা করে ফেলি। মনে করি এটাই আমাদের শেষ রোজা। যারা মোবাইলে গান শোনেন তারা অন্তত এই মাসটা গান বন্ধ রাখুন, এর পরিবর্তে কোরআন তেলাওয়াত, হামদ, কাসিদা শুনুন। আশরাফ আলী থানভী (রহ.) বলেন, কেউ কি কখনও বলে এটা ছোট আগুন ওটা বড় আগুন। ছোট হোক, বড় হোক পুড়িয়ে ধংস করার জন্য এক শলতে আগুনই যথেষ্ট। তেমনি গোনাহ ছোট হোক বা বড় হোক সব ক্ষতিকর।
নেককারদের আমল
রমজান মাসে বিশেষ কিছু সুন্নত রয়েছে, যথা- বিশ রাকাত তারাবিহ সালাত আদায় করা, সেহরি খাওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, ইফতার করা ও করানো, কোরআন করিম বেশি বেশি তিলাওয়াত করা এবং শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা।
রমজানে প্রতিটি ইবাদতের বিনিময় সত্তরগুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। একটি নফল পালন করলে একটি ফরজ পালন করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাই রমজান মাসে নফল ইবাদত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসের বিশেষ নফল আমলসমূহ হলো- কোরআন মাজিদ একাধিকবার খতম বা পূর্ণ পাঠ করা; কালিমা তৈয়্যবা বেশি বেশি পাঠ করা; দরুদ শরিফ বেশি বেশি পাঠ করা; তওবা ও ইস্তিগফার করতে থাকা; সর্বদা তসবি তাহলীল ও জিকির করতে থাকা; দীনী শিক্ষা ও দীনী দাওয়াতি কাজে মশগুল থাকা; ধর্মীয় বই-পুস্তক, তাফসির, হাদিস, ফিকাহ ও ইসলামি সাহিত্য পড়া ও অন্যকে পড়তে সাহায্য করা; দীনী মজলিশ ও মাহফিল আয়োজন করা; অধীনস্থ কর্মচারী ও শ্রমিকদের কাজের চাপ কমিয়ে দেওয়া এবং তাদের পূর্ণ মজুরি ও অতিরিক্ত সম্মানী প্রদান করা; বেশি বেশি দান খয়রাত করা; ইহসান তথা সদা আল্লাহর অস্তিত্বের উপস্থিতির ধ্যান করা ও আল্লাহর সঙ্গ বাস্তবে অনুভব করা অথবা আল্লাহর সার্বক্ষণিক নজরদারির চেতনা মনে জাগ্রত রাখা। (বুখারি: ৪৮)।
ইবাদতের মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়াবি কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার করা উচিত। হাদিসে এসেছে, ‘ইফতারের মুহূর্তে আল্লাহতায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে।’ (জামিউস সাগির: ৩৯৩৩)