রাজবাড়ী হাজেরা বেগম নামে এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যার দায়ে পুত্রবধূ স্বপ্না বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক মো. সোহেল মিয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর মামলার অপর আসামি কবির শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত স্বপ্না বেগম রাজবাড়ী সদর উপজেলার বারবাকপুর (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের মো. হাফিজুর রহমানের স্ত্রী ও মো. সোহেল মিয়া সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কোমরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র দায়রা জজ মোসাম্মৎ জাকিয়া পারভিন এ রায় দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, হাজেরা বেগমের বড় ছেলে ও স্বপ্নার স্বামী মো. হাফিজুল শেখ বিদেশে থাকতেন। হাফিজুলের স্ত্রী তার ছেলের জন্ম নিবন্ধন করার জন্য ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে চেয়ারম্যানকে না পেয়ে ফিরে আসার সময় সোহেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে সোহেল স্বপ্নার ছেলের জন্ম নিবন্ধন করে দেন। তখন থেকেই স্বপ্না ও সোহেলের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি হয়। তারা নিয়মিত ফোনে কথা বলতেন। এর মধ্যেই সোহেল একদিন রাতে স্বপ্নার বাড়িতে যায় কিন্তু স্বপ্নার শাশুড়ি টের পেলে তিনি ফিরে আসেন।
এরপর ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট রাতে স্বপ্না তার শিশুসন্তান নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে সোহেল স্বপ্নার ঘরে প্রবেশ করে স্বপ্নার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করলে স্বপ্নার শাশুড়ি টের পেয়ে যান। এ সময় সোহেল ও স্বপ্না মিলে হাজেরা বেগমকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে। এ ঘটনার পরদিন ১৭ আগস্ট হাজেরা বেগমের স্বামী তমিজ উদ্দিন শেখ বাদী হয়ে রাজবাড়ী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর ২০১৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ডিবির সদস্যরা সোহেলকে গ্রেপ্তার করে।
পরে ১৫ সেপ্টেম্বর ডিবির একটি দল স্বপ্নাকে গ্রেপ্তার করে। ওইদিন তাকে আদালতে পাঠানো হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া কবির নামে একজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।
রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট উজির আলী শেখ বলেন, মামলাটি তদন্ত শেষে স্বপ্না, সোহেল ও কবিরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ। দীর্ঘ সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্বপ্না ও সোহেলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একইসঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। আর কবির শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে