1. [email protected] : নিউজ ডেস্কঃ : নিউজ ডেস্কঃ
  2. [email protected] : unikbd :
শনিবার, ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,
১৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়ায় পুলিশ ফাঁড়িতে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের পিটিয়ে ছেলেকে নিয়ে গেলেন এমপি

  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪

বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু ও তার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ফাঁড়িতে এসে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের পিটিয়ে এমপির ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রোববার (৭ এপ্রিল) দিবাগত গভীর রাতে বগুড়া সদর ফাঁড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

বগুড়া-৬ (সদর) আসনের এমপি রাগেবুল আহসান রিপুর লোকজনের মারধরে আহত হয়ে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন জেলা যুবলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক জিহাদুশ শরীফ পরাগ (৪৮)।

ওয়াকিবহাল একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মেসেজ দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম  বলেন, ‘আমি গতরাত ১০টার দিকে বগুড়া জিলা স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। এ সময় একটি ছেলে সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল নিয়ে এসে আমার পায়ে ধাক্কা দেয়। আমি আঘাত পেয়ে মোটরসাইকেলের চাবি খুলে নিয়ে তাকে বেপরোয়াভাবে চালানোর কারণ জিজ্ঞাসা করি। দুঃখ প্রকাশ করায় তাকে চাবি ফিরিয়ে দেই। পরে জানতে পারি তার নাম আবির। তার বাবা শিবগঞ্জ উপজেলার পিরব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।’

‘এর কিছুক্ষণ পর আবির আমাদের এমপি রাগেবুল আহসান রিপু ভাইয়ের ছেলেকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। এমপির ছেলে প্রতিত আহসান (১৮) মোটরসাইকেলে কিশোর গ্যাংয়ের ১৫-২০ জনকে নিয়ে এসে আমাকে ঘিরে মারধর শুরু করে। এ সময় যুবলীগের নেতা পরাগ ও আদনান আমার সঙ্গে ছিলেন। পরে টহল পুলিশ এসে আমাদের দুই পক্ষকে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।’

‘পুলিশ ফাঁড়িতে যাওয়ার পরে জানতে পারি এমপি সাহেব আসছেন। এর কিছুক্ষণ পরই রিপু ভাই প্রায় ২০-৩০ জন স্থানীয় সন্ত্রাসীকে নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে ঢোকেন। তিনি কিছু বলার আগেই তার সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসীরা লাঠি ও লোহার রড দিয়ে আমাদের উপর চড়াও হন। পুলিশের সামনেই আমাদের মারধর করা হয়। এর পর এমপি তার ছেলেকে নিয়ে চলে যান,’ দাবি করেন রঞ্জু।

তিনি আরও বলেন, মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরাগকে পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার পর পুলিশ আদনান এবং রঞ্জন নামের এক পথচারীকে ভোর ৪টা পর্যন্ত ফাঁড়িতে আটকে রেখে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।

আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পরাগ  বলেন, ‘আমার কোনো দোষ ছিল না। আমি বিষয়টি মিটমাট করার জন্য গিয়েছিলাম। এমপি সাহেব ফাঁড়িতে আসার পরে আমি তাকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গেলে তার নির্দেশে তার ছেলেসহ দুজন আমার উপর হামলা করে। তারা লাঠি, রড, স্ট্যাম্প দিয়ে আমাদের চার-পাঁচজনকে পেটায়।’

এদিকে যুবলীগ নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বগুড়া জেলা যুবলীগ। তারা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।

পরাগ ও আদনানের ওপর হমালার প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সংগঠনটি। মানববন্ধনে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়ে শহর যুবলীগের সভাপতি মহাফুজুল আলম জয় বলেন, ‘ফাঁড়িতে পুলিশের উপস্থিতিতে কীভাবে যুবলীগ নেতাদের ওপরে হামলা হয়? একজন সংসদ সদস্য যিনি আওয়ামী লীগের অভিভাবক তার উপস্থিতিতে তারই লোকজন হামলা চালায়। অপরাধী যেই হোক যুবলীগ কাউকে ছাড় দেবে না। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যদি অপরাধিদের গ্রেপ্তার না করা হয় তাহলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

পুলিশ ফাঁড়িতে লোকজন নিয়ে গিয়ে কেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের পিটিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি শুনেছি একটা গ্রুপ আমার ছেলেকে মারধর করেছে। আমার ছেলের কিছুদিন আগেই একটি অপারেশন হয়েছে। ছেলেকে মারধরের কথা শুনে আমি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। সেই কারণে আমি ফাঁড়িতে গিয়েছি।’

আপনার সামনেই কেন মারধর করা হলো জানতে চাইলে এমপি বলেন, ‘আমি নিষেধ করেছি কিন্তু শোনেনি। মারধর করে ঠিক করেনি। যাই ঘটুক সেটার জন্য আমি দুঃখিত।’

এই ঘটনার পর ফাঁড়িতে আসেন বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম, এবং সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ। তাদের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।

যুবলীগ নেতা পরাগকে কেন মারল জানতে চাইলে বলেন, ‘তাকে আমি রুমে রেখে এসেছিলাম। উনি আগ বাড়িয়ে সামনে এসেছিলেন।’ মারধরের শিকার ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদেরকে কেন ৪টা পর্যন্ত আটকে রেখে মুচলেকা নিয়ে ছেড়েছেন জানতে চাইলে সুজন মিয়া বলেন, ‘মুচলেকা নিয়েছি কিন্তু ৪টা পর্যন্ত আটকে রাখিনি। আগেই ছেড়ে দিয়েছি।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ফাঁড়িতে এসে এমপি রিপু চেঁচামেচি করেছেন। এমপি উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমার ছেলে কি কোনো অপরাধ করেছে? উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, না স্যার! আপনার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪
Developed By UNIK BD