কলকতায় চিকিৎসা করাতে এসে নৃশংসভাবে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তার হত্যার মাস্টারমাইন্ড মার্কিন প্রবাসী বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহিন। তিনি ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম সেলিমের ছোটভাই।
ঘটনা জানাজানি হতেই শুক্রবার রানাঘাট সীমান্ত সংলগ্ন শাহিনের কোটচাঁদপুর পৌরসভার পাশে শাহিনের পৈতৃক বাড়ির সামনে ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভে শামিল হন এলাকাবাসী। তার অগাধ সম্পত্তি নিয়েও তৈরি হয়েছে রহস্য। একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত শিলাস্তি রহমানকে নিয়েও। সুন্দরী শিলাস্তি মডেল হতে গিয়ে অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়েন। শাহিনের বান্ধবী হওয়াই কাল হলো তার।
শাহিন ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রামে মেরিন আকাডেমিতে পড়াশোনা করাকালীন আমেরিকা চলে যান। ঢাকায় ফিরে বরিশালের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। শাহিনের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা আমেরিকায় বসবাস করে। আমেরিকায় পাড়ি জমালেও নিয়মিত বাংলাদেশে আসতেন শাহিন। বাল্যবন্ধু আনোয়ারুলের হাত ধরে চোরাচালানে যুক্ত হওয়া আর অবৈধ ব্যবসার সূত্রেই বাংলাদেশ ও ভারতে শাহিন গড়ে তোলেন বিশাল সাম্রাজ্য।
কোটচাঁদপুরে শাহিনের গ্রামে ৩০ বিঘা জমির উপর বিশাল বাগানবাড়ি ও রিসোর্ট। সুউচ্চ প্রাচীরঘেরা, সিসি ক্যামেরার বেষ্টনী। পাহারায় রয়েছে বিদেশি বেশ কয়েকটি কুকুর। বাড়িতে প্রায়ই অতিথি হয়ে আসতেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বড় বড় ব্যবসায়ী ও নায়িকারা।
এদিকে, এমপি আনোয়ারুল আজিমের হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া তরুণী শিলাস্তি রহমান চেয়েছিলেন মডেল হতে। শিলাস্তির গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরে। তবে সে বড় হয়েছেন পুরাতন ঢাকায়। মডেল হওয়ার উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে বিত্তশালীদের ডেরায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। সেভাবেই আক্তারুজ্জামান শাহিনের খপ্পরে পড়েন এবং চলে যান অন্ধকার জগতে। মার্কিন প্রবাসী শাহিন দেশে এলেই ঘুরে বেড়াত তার সঙ্গে। শাহিনের ফ্ল্যাটে বিভিন্ন পার্টিতে দেখা যেত শিলাস্তিকে।
কলকতায় এমপি আনোয়ারুল খুন হওয়ার পর মাস্টারমাইন্ড শাহিনের বান্ধবী হিসেবে নাম আসে এই শিলাস্তি রহমানের। আনোয়ারুলকে খুনের পর সোজা ফেরেন তিনি। বিমানবন্দর থেকে চলে যান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শাহিনের অভিজাত ফ্ল্যাটে। এমপিকে খুন করে সফল হওয়ায় ওই রাতেই শাহিন সেখানে পার্টির আয়োজন করে। তবে এসব করেও পুলিশের নাগাল এড়াতে পারেনি তারা। ঘটনা জানাজানি হতেই দুই হত্যাকারীর সঙ্গে শিলাস্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল শুক্রবার আদালতে শিলাস্তি কেঁদে ফেলে। ওকালতনামায় শিলাস্তি রহমানের সই নিতে গেলে সে আইনজীবীকে বলে, ‘আমি কেন সই করব? আমি কি আসামি নাকি? এসব বিষয়ে কিছু জানি না। আমি শুধু ফ্ল্যাটে ছিলাম। কিছু করিনি।’