ছোট টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে জয়ে খুব কাছে গিয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। নিউইয়র্কের নাসাউয়ের কঠিন পিচে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখাছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তাওহীদ হৃদয়। তবে এক আম্পায়ার্স কলে তছনছ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন। এদিন অবশ্য ভাগ্যও কিছুটা খারাপ ছিল শান্তদের।
বাউন্ডারি লাইনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাচ। তার আগে আম্পায়াদের দুটো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। সবমিলিয়ে নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের হারের চিত্রনাট্য যেন একটু বেশিই বৈচিত্রপূর্ণ ছিল। তবে, ফলাফল ছাপিয়ে আলোচনায় আম্পায়ারিং ইস্যু। এই নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আওয়াজ তুলেছেন সাবেক ক্রিকেটাররা। যার ফলে বিপদে পড়েছে সেই আম্পায়ার।
ক্রিকবাজকে ডুল বলেন,” ভাবুন, বাংলাদেশের জায়গায় ভারত খেলছে ফাইনাল ম্যাচে। আমি বলতে চাইছি, যেভাবে এই পদ্ধতি কাজ করছে, সেখানে কিছু একটা পরিবর্তন অবশ্যই আনতে হবে। কারণ এটা খুবই বাজে একটা ভুল ছিল। একেবারেই বাজে সিদ্ধান্ত। একেবারে বন্দুকধারীর মত দ্রুতগতিতে আম্পায়ার আঙুল তুলেছে।”
ইনিংসের ১৭তম ওভারে ওটনিয়েল বার্টম্যানের সেই বল থেকে বাংলাদেশের চার রান প্রাপ্য, বলছেন ডুল। এমন ঘটনা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ বলেও ঘটতে পারতো বলে মনে করেন ডুল। পুরো টুর্নামেন্টে ভালো আম্পায়ারিং হলেও এ নিয়ে অসন্তুষ্ট এই ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষক।
” আমাদের বলতেই হবে পুরো টুর্নামেন্টেই আমরা খুব ভালো কিছু আম্পায়ারিং দেখেছি। কিন্তু এইক্ষেত্রে সেটা ছিল না। তার চেয়ে বড় কথা, লেগবাইয়ে চার রান হওয়া দরকার ছিল। ধরা যাক, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ বলে এটা ঘটলো। আর একটা দল এমন বাজে সিদ্ধান্তের কারণে হেরে গেল।”আম্পায়ার্স কল ও এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্তে আইসিসিকে পরিবর্তন আনতে হবে বলেন ডুল।
“যেভাবে এইসব চলছে, তাতে কিছু পরিবর্তন আনতেই হবে। কারণ এখন প্রায়ই এসব হচ্ছে। প্রতিবারই এমন কিছু প্রশ্ন আমি করেছি আইসিসি টুর্নামেন্টের আগে বা পরে। তখন তারা বলে, আমাদের এখানে কিছু করার নেই। এটা খেলার ফলাফলে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।”
এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি বার্তা দিয়েছেন ভারতের নামী কোচ ওয়াসিম জাফর। তিনি লিখেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহকে ভুলভাবে এলবিডব্লিউ দেওয়া হয়েছিল। বলটা পরে লেগ বাইয়ে চার রান হয়ে যায়। সিদ্ধান্তটি ডিআরএসে বদলে যায়। তবে বাংলাদেশ ৪ রান পায়নি যেহেতু বল ডেড হয়ে যায় আউট হওয়ার সাথে সাথেই, যদিও তা ভুলভাবে দেওয়া হয় তবুও। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ রানে ম্যাচটা জিতল। বাংলাদেশের জন্য সমবেদনা।’
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর অনুষ্ঠানে ভারতের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার বলেন, ‘আসলে যেহেতু ভক্তরাও এটি নিয়ে কথা বলছে সেক্ষেত্রে আমি ভাবলাম, আম্পায়াররা কি অপেক্ষা করতে পারেন অ্যাকশনটা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত? বল বাউন্ডারি পর্যন্ত চলে যাওয়ার পর আউট অথবা নট আউট দিলেন, পরে রেকর্ড করলেন এবং রিভিউর পর তা প্রয়োগ করলেন।’
সঞ্জয়ের সাথে একমত পোষণ করে তামিম বলেন, ‘হ্যাঁ আমি শক্তভাবে সঞ্জয় ভাইয়ের সাথে একমত। আমার কাছে মনে হয়, আপনার কাছে সময় আছে। আপনি চাইলে ২ সেকেন্ড অপেক্ষা করে দেখতে পারেন বল বাউন্ডারি হচ্ছে নাকি যাচ্ছে না এবং এরপর সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। আমি মনে করি, ব্যাটার যদি আউট না হন এবং বল যদি তার থাই প্যাড বা প্যাডে লেগে বাউন্ডারি হয়ে যায় তাহলে রান দেওয়া উচিত, যদি সে নট আউট হয়। এই ৪ রান বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারত। এটা হতে পারত। আমি হয়ত সমর্থকদের মত কথা বলছি। তবে যদি ভেবে দেখেন, এই ৪ রান খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত। আমি ধারাভাষ্য শুনছিলাম নাসের হুসেইনসহ সবাই এটা নিয়ে কথা বলছিলেন। আমার মনে হয়, এটার দিকে আইসিসির নজর দিতে পারে। এটা আসলে চাইলে এড়ানো যায়। এটা এমন কিছু না যে এখানে অনেক বড়সড় কোনো পরিবর্তন আনতে হবে।’
এরপর রমিজ বিতর্কিত ইস্যুতে বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আনন্দের এবং বাংলাদেশের জন্য হতাশার মুহূর্ত ছিল হৃদয়ের আউট হয়ে যাওয়া। সে দারুণ ব্যাট করছিল। সে সহজাত প্রতিভাও বটে। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে। কিন্তু রাবাদার বলে তাকে এমন একটি আউট দিয়ে দিয়েছে আম্পায়ার, যেটি না দিলেও পারত। ওই আউট নাও হতে পারত। সেটা ছিল আম্পায়ার্স কল এবং বল লেগেছে অনেক ওপরে। এরপর লেগ সাইড দিয়ে বল চলেও যাচ্ছিল। মনে হচ্ছে ভাগ্যও বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। তখন আম্পায়ার যদি হৃদয়ের আউট না দিত; কারণ, সেটা আউট না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি মনে হচ্ছিল, তবে এই ম্যাচ বাংলাদেশ জিততেও পারত। আর এমন সময়েই রাবাদা একটি দারুণ ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছে। যার ফলে হৃদয় আউট হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে বেরিয়ে গেছে।’