মৌসুম অনুযায়ী এখন বাজারে চোখ মেলে তাকালেই রকমারি ফল পাওয়া যাচ্ছে। আমরাও পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ফল কিনে থাকি। পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়া হয় তা। ভ্যাপসা কিংবা তীব্র গরমের মাঝে অবশ্য ফলমূল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এ জন্য বেশি বেশি ফল খাওয়া হয়।
ফলের মৌসুমে লিচু ও কাঁঠাল বেশ জনপ্রিয় এবং সবার পছন্দ। অনেক সময় বাড়িতে আগে থেকে কাঁঠাল থাকে এবং বাজার থেকে লিচু কেনা হয়। এ সময় কেউ কেউ বলে থাকেন―লিচু ও কাঁঠাল একসঙ্গে খাওয়া ঠিক নয়। কেউ কেউ আবার স্বাস্থ্যগুণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। কারও মতে লিচুতে পুষ্টি উপাদান বেশি, আবার কারও মতে কাঁঠাল উপকারী বেশি। সম্প্রতি ভারতীয় একটি সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী মজুমদার। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
লিচু সেরা: সবার প্রিয় লিচু ফল হচ্ছে ভিটামিন-সি এর ভান্ডার। যা শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এতে থাকা উপাদান লিভার সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। পাশাপাশি লিচুতে বিদ্যমান কিছু ফ্ল্যাভানয়েডসের গুণ শরীরে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিও আটকে দিতে পারে। এ জন্য সুস্থ থাকতে নিয়ম করে লিচু খাওয়া যেতে পারে।
কাঁঠালও কোনো অংশে কম নয়: লিচুর মতোই গরমে সেরা ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কাঁঠাল। এতে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, রাইবোফ্ল্যাভিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এ জন্য শরীর ও স্বাস্থ্যর হাল ফেরাতে নিয়মিত কাঁঠাল খেতে পারেন।
এছাড়াও কাঁঠালে উপকারী ফ্ল্যাভানয়েডস, ক্রারোটিনয়েডস উপাদান রয়েছে। যা শরীরকে প্রদাহ প্রশমিত করতে সহায়তা করে। ফলে ছোট ছোট বিভিন্ন রোগ দূরে থাকে।
লিচু না কাঁঠাল, কোনটি সেরা: স্বাস্থ্যগুণের কথা বিবেচনা করলে দুটিই সেরা। দুটি ফলেই ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। তবে ক্যালোরির কথা ভাবলে লিচুর থেকে কাঁঠালের ক্যালোরি ভ্যালু বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে মাত্র ৬৬ ক্যালোরি থাকে, আর সম-পরিমাণ কাঁঠালে থাকে প্রায় ১৬৬ ক্যালোরি। এ জন্য লিচুর থেকে কাঁঠাল হজম করাও কিছুটা কঠিন কাজ। এসব বিচেনা করলে বলতেই হবে যে, কাঁঠালের দিক থেকে লিচু কিছুটা হলেও এগিয়ে।
কতটুকু খাবেন: একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ৪/৫ কোয়া কাঁঠাল বা সম-পরিমাণ লিচু খেতে পারেন। এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বরং উপকার মিলবে। তবে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মধ্যম হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীরা লিচু ও কাঁঠাল খাওয়ার আগে সতর্ক থাকুন। কারণ, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সপ্তাহে এক কোয়া কাঁঠাল বা একটি লিচু খেতে পারেন। এতে সমস্যা হবে না। কিন্তু বেশি খেলেই বিপদ বেড়ে যেতে পারে। আর যদি লিচু বা কাঁঠাল খাওয়ার পর কারও কোনো ধরনের সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।