সিএমপির এডিসি মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের মালিকানায় থাকা প্রায় ১১ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন গত সোমবার আদালতে উভয়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন।
আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক বেগম জেবুননেছা দুদককে উভয়ের সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন। আদেশের ভিত্তিতে দুইজনের মালিকানায় থাকা প্রায় ১১ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ থাকবে।
এডিসি মোহাম্মদ কামরুল হাসানের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলায়। ১৯৮৯ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি এসআই পদে পুলিশে যোগ দেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী-বাঁশখালী উপজেলাসহ একাধিক থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি সিএমপির পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে এডিসি (ক্রাইম) পদে কর্মরত।
দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু মঙ্গলবার বলেন, পুলিশের ওই কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান করেছে। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রাথমিক অনুসন্ধানে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। এসব সম্পদের সঙ্গে কামরুল হাসান ও তার স্ত্রীর আয়ের উৎসের কোনো সংগতি পাওয়া যায়নি। এখন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নোটিস দেবেন। এরপর নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদক ৮ জুলাই দুজনের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করে আদালতে। মঙ্গবার আদালত সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, দুদকের অনুসন্ধান শুরুর পর বিপুল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির খোঁজ মেলে। আর অনুসন্ধানের মধ্যেই ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী পরস্পরের যোগসাজশে তাদের সম্পদ হস্তান্তর, বিক্রি অথবা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। যাতে কোনো প্রমাণ না থাকে।
এ অবস্থায় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন গত সোমবার আদালতে উভয়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক বেগম জেবুননেছা দুদককে উভয়ের সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, সিএমপির এডিসি ও তার স্ত্রীর কাছে থাকা সমুদয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আমরা আদালতের আদেশ পাওয়ার পর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবা। আদেশ বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সব অফিসে চিঠি দেব। এরপর সম্পদের রিসিভার নিয়োগের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। পাশাপাশি এই মামলায় দুদকের চলমান কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।
দুদক সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৩ সালের ৩১ মে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে কামরুল হাসানের সম্পদ অনুসন্ধানের অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৪ আগস্ট তাকে দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে দুদক কর্মকর্তা এমরান হোসেন চলতি বছরের ১৩ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকা এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে এক কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য উল্লেখ করা হয়।
এই প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, এডিসি কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মার মোট স্থাবর সম্পদ ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকার। এর মধ্যে আছে চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর হালিশহরে পৃথকভাবে ৪০ শতক জমি, পশ্চিম নাছিরাবাদে শূন্য দশমিক ৩৩ শতক ও পৃথকভাবে দুই কড়া তিন সমস্ত ছয় ভাগের এক ভিটি ভূমি, ঢাকার সাভারে ২৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি, সাভার সিটি সেন্টার অ্যান্ড টাওয়ার নামের একটি ১২ তলা ভবনের বেসমেন্টে ২২টি দোকানের সমান জায়গা যা ‘ইনফিনিটি মেগামল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
স্থাবর সম্পদের তথ্যে দেখা যায়, নগরীর খুলশী মৌজায় দি চিটাগং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের আওতাধীন জমিতে নির্মিত ফয়জুন ভিলা নামের একটি ভবনে মোট ২ হাজার ৭০৬ বর্গফুট জায়গা, পশ্চিম নাছিরাবাদে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও পৃথকভাবে শূন্য ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ নাল জমি, পশ্চিম নাছিরাবাদে ৭ শতাংশ ভিটের ওপর ঘর, ঢাকার সাভারের আনন্দপুরে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ নাল জমি, সাভার সিটি টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট এবং সিডিএর অনন্যা আবাসিক এলাকায় পাঁচ কাঠার একটি প্লট।
তিনি এবং তার স্ত্রী উভয়ের অর্জিত অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার। এর মধ্যে আছে সোনালী ব্যাংকে ১৫ লাখ করে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, বাংলাদেশ ব্যাংকে ৪৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, সায়মা হাসানের নামে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের চারটি লাইটারেজ জাহাজ এমভি প্যাসিফিক রাইডার, এমভি পানামা ফরেস্ট-১, এমভি রাইসা তারাননুম এবং বার্জ আল বাইয়েৎ।