শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা জানি এ রায় আদালতের মধ্যে অবশিষ্ট নেই। আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে আদালতের সম্পর্ক নেই। সবকিছুই সরকার এবং নির্বাহী বিভাগের হাতে। তাই তাদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা বলেছি, কোটা কেবল তিনটি ক্ষেত্রে দেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী বাদে সব কোটা বাতিল করতে হবে। আর কোটা হবে ৫%।
আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ হোসাইন পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, (বৃহস্পতিবার) ৩টা থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে। সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে অবস্থান নেবেন এবং অন্যান্য দিনের ব্লকেড কর্মসূচির মতোই পালন করা হবে। তিনি আরও বলেন, দুটি কাজ করলে আমরা ঘরে ফিরে যাব। প্রথমত, অযৌক্তিক কোটা বাদ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, কোটা সংস্কারের জন্য পরিষদ গঠন করতে হবে। যতদিন এই দুটি কাজ আমলে নেওয়া হবে না ততদিন এক দফা দাবিতে আমাদের ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে।
শেকৃবি প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর আগারগাঁও মোড় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত সড়ক অবরোধ করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। ফলে দিনভর মিরপুর-ফার্মগেট এবং মহাখালী-শিশুমেলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। জাবি প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির আন্দোলন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। সেই কর্মসূচির অংশে চট্টগ্রামে রেল ও সড়কপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। চবি প্রতিনিধি জানান, আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ প্রত্যাখ্যান করে চট্টগ্রামে রেল ও সড়কপথ অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিভুক্ত কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দিনব্যাপী আন্দোলনে চট্টগ্রাম শহরজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকা অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকাল পৌনে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে চড়ে ১৭ কিলোমিটার দূরে দেওয়ানহাটে আসেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে দেওয়ানহাট রেলপথ অবরোধ করেন তারা। এর ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাবি প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে রাবির প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা। পরে সেখান থেকে রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত আন্দোলন করেন। এ সময় রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সব যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
মেট্রোরেলে উপচে পড়া ভিড় : এদিকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিতে ঢাকায় যান চলাচলে অচল হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ঘরে ফেরা মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল মেট্রোরেল। শিক্ষার্থীদের চলমান সর্বাত্মক ব্লকেডে মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সরেজমিন মেট্রোরেলের শাহবাগ, কারওয়ান বাজার ও মিরপুর-১০ স্টেশনে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। এক-দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট মিলছে না। অনেক স্টেশনে টিকিটের লাইন তিন তলা থেকে দুই তলা পর্যন্ত চলে এসেছে।