লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। এ সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রোববার রাত ১টার দিকে সদর মডেল থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদার ১০ জনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের ভাষ্যমতে, নিহতরা হলেন- রায়পুরের ওসমান গনি, মো. কাউসার, সদরের সাদ আল আফনান, তৌহিদ কবির রাফি, রিয়াজ চৌধুরী, আহমেদ শরীফ, হারুন মোল্লা, সিফাত চৌধুরী ও রাসেল। নিহতের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ সমর্থক। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীরা জানায়, লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম এলাকায় বেলা ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে গুলিবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হয়।
একপর্যায়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারীরা তার শহরের তমিজ মার্কেট এলাকার বাসা ঘেরাও করেন। এ সময় চেয়ারম্যান টিপু দলবল নিয়ে বাসায় ছিলেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের ওপর টিপুর বাসার ছাদ থেকে গুলি করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
পরে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা টিপুর বাসায় পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। একপর্যায়ে টিপুর বাসা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় পিটিয়ে আহত করা হয় ২০-২৫ জনকে। এরমধ্যে ৫-৬ জনের মরদেহ সড়কে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ যাননি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা সেখানে যায়।
এ সময় আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে পারেনি। রাত ১২টার পর পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
এছাড়া আন্দোলনকারীরা লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেলের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার সময় বাসায় এমপি ছিলেন না। তিনি পরিবারসহ ঢাকায় অবস্থান করছেন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. অরুপ পাল বলেন, রাত ৮টা পর্যন্ত আহত ৬৫ জনকে হাসপাতাল আনা হয়েছে। এর অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। মৃত অবস্থায় ৩ জনকে আনা হয়। ঢাকা নেওয়ার পথে একজন মারা গেছেন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বক্তব্য জানা যায়নি।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। ভেতরে কোনো মরদেহ বা কেউ আটকা পড়ে নাই।