সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে রোববার বিপুল প্রাণহানির খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে’।
বিবিসির অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ ও সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষের মধ্যে বাংলাদেশে রোববার অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
এতে বলা হয়, রোববার বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ দমন করতে সারাদেশে আবারও নৈশকালীন কারফিউ কার্যকর করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হলেও এখন তা ব্যাপক সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে
রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসির নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানে বলেছেন, কর্তৃপক্ষ ‘সংযম’ দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সংযম না দেখাতাম তাহলে রক্তপাত হতো। আমার ধারণা, আমাদের ধৈর্যেরও সীমা আছে।’
বিবিসি বলছে, ঢাকার একটি প্রধান চত্বরে (শাহবাগ) হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। শহরের অন্যান্য স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সঙ্গে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী একটি হাসপাতালের বাইরে গাড়ি ও মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।’
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নতুন করে সহিংসতায় ১৩ জন পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং স্টান গ্রেনেড ছুড়ে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করেছে। বিক্ষোভকারীরা শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছে।
রোববার রাজধানী ঢাকা এবং উত্তরাঞ্চলের জেলা বগুড়া, পাবনা ও রংপুরের পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চলীয় মাগুরা, পূর্বের কুমিল্লা এবং দক্ষিণের বরিশাল ও ফেনীতে মৃত্যুর খবর দিয়েছেন পুলিশ ও চিকিৎসকরা। এর আগে জুলাই মাসে বিক্ষোভে অন্তত ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় আলজাজিরা।
ঢাকা থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক তানভীর চৌধুরী পরিস্থিতিকে ‘অস্থির এবং বিপজ্জনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিক্ষোভকারীরা বলছে, সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বে না। তিনি বলেন, চলমান কর্মসূচি দেশজুড়ে ব্যাপক সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অন্তত ১১ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বেশ কয়েকটি মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং শেখ হাসিনার সমালোচকরা বলছে, সরকার আন্দোলন দমনের জন্য অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে। ঢাকার রেস্তোরাঁ কর্মী জহিরুল ইসলাম আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমরা চাই সরকার পদত্যাগ করুক।’
ভারতের এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের নতুন সংঘর্ষে ৯১ জন নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস।